বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বানিজ্যিক এই ব্যাংকটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দিলকুশা বাণিজ্যিক এয়াকায় অবস্থিত। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে অগ্রণী ব্যাংকের ৯৬০ টি শাখা রয়েছে। মোট ৬ ধরনের ব্যাংকিং সেবা (জেনারেল, কৃষি ও গ্রামীণ, গ্রিন, মার্চেন্ট, ইসলামী এবং এজেন্ট ব্যাংকিং), একাউন্ট খোলা, ডিপিএস, সহজ শর্তে লোন সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে।
সম্মানিত ভিজিটর, “টিপসওয়ালী ফাইন্যান্স” এর আজকের আয়োজনে আপনাকে স্বাগতম। আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি- অগ্রণী ব্যাংক লোন, সুদের হার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, লোন পাওয়ার যোগ্যতা, ও অগ্রণী ব্যাংক লোন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত।
অগ্রণী ব্যাংক লোন সমূহ
বর্তমানে বাংলাদেশ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ৭ ধরনের লোন প্রদান করছে। এগুলো হচ্চে- ১) পার্সোনাল লোন, ২) যেকোন কাজের জন্য লোন, ৩) মুক্তিযোদ্ধা লোন, ৪) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী লোন, ৫) প্রবাসী লোন, ৬) স্বল্পমেয়াদী লোন, ৭) গ্রিন ফাইন্যান্স লোন।
চলুন এ পর্যায়ে বাংলাদেশ Agrani Bank LTD- এর বিভিন্ন প্রকার লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অগ্রণী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
বাংলাদেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকটি পার্সোনাল লোন সুবিধা প্রদান করে। আপনি যদি একজন বেতনভোগী ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে অগ্রণী ব্যাংক পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। কোন প্রকার জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৫ বছর মেয়াদে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন প্রদান করে থাকে। পার্সোনাল লোনের সুদের হার ৯% এবং মাসিক কিস্তি সুবিধা রয়েছে।
পার্সোনাল লোনের শর্তাবলীঃ
- বেতনভোগী/চাকুরীজীবী ব্যাক্তিরা লোনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
- সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা।
- বয়সসীমা নূন্যতম ১৮ ও সর্বোচ্চ ৫৫ বছর।
- সুদের হার ৯ শতাংশ।
- ৫ বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
- কোন জামাতন বা সিকিউরিটি প্রয়োজন নেই।
অগ্রণী ব্যাংক যেকোন কাজের জন্য লোন
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করেছে। যে কোন কাজ সম্পাদানের জন্য লোন অর্থাৎ আপনি যদি ইতিমধ্যে ৫ বছরের বা তার বেশি সময় ধরে একটি সেবা প্রদান, ব্যবসায় বা কাজ করতেন এবং পাঁচ বছর আগে সেটি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেটি আর নেই, কিছু করতে চাইছেন বা পূর্বের কাজটি আবার শুরু করতে চান তাহলে আপনি লোন নিয়ে আবার নতুন কিছু শুরু করতে পারেন।
যেকোন কাজের জন্য লোনের শর্তাবলীঃ
- যেকোন একটি কাজে ৫ বছর একটিভ ছিল এবং ৫ বছর পূর্বে সে কাজটি ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে করছে না এমন ব্যক্তি।
- সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা।
- সুদের হার ৯% (পরিবর্তন যোগ্য)
- ৫ বছর মেয়াদী ও মাসিক কিস্তি সুবিধা।
- জামানত ও ব্যাক্তিগত গ্যারান্টার।
মুক্তিযোদ্ধা লোন
অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা চালু করেছে। বাংলাদেশ সকারের গেজেটভুক্ত সকল মুক্তিযোদ্ধা যারা অগ্রণী ব্যাংকের যেকোন শাখা হতে ভাতা বা ভর্তুকি গ্রহণ করে। তবে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে অথবা মেয়ের কোন ছোট ব্যবসায়, আত্মনির্ভরশীল বা অন্য যেকোন চাকরির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা লোনের শর্তাবলীঃ
- গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যিনি অগ্রণী ব্যাংকের যেকোন শাখা হতে সরকারি ভাতা কিংবা প্রণোদনা গ্রহণ করে।
- স্ত্রী, ছেলে বা মেয়েকে কোন পেশার সাথে জড়িত থাকতে হবে।
- সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা।
- সুদের হার ৮ শতাংশ (পরিবর্তন যোগ্য)
- পরিশোধের সময়কাল ৫ বছর।
- মাসিক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হতে কিস্তি হিসেবে টাকা কেটে রাখা হবে।
অগ্রণী ব্যাংক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী লোন
বাংলাদেশের অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো অগ্রণী ব্যাংকও অবসরপ্রাপ্ত সকারী চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা চালু করেছেন। তবে বয়স সীমা সর্বোচ্চ ৬৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঋণ প্রকল্পের আওতায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সকারী চাকরিজীবী সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী লোনের শর্তাবলীঃ
- যে কোন সরকারি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী
- আবেদনকারীর বয়স সর্বোচ্চ ৬৫ বছর বা তার কম।
- সুদের হার ৯ শতাংশ (পরিবর্তন যোগ্য)
- ৫ বছর মেয়াদে পরিশোধযোগ্য।
- সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা।
- ব্যাক্তিগত গ্যারান্টার প্রয়োজন।
অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী ঋণ
প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ব্যাংক বিশেষ ঋণ সুবিধা চালু করেছেন। মূলত বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এবং বিদেশে একটি বৈধ চাকরির ভিসা পেয়েছে তাদের জন্য এই বিশেষ লোন। যা ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। তাই অন্যান্য লোন থেকে কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশের নাগরিক ও বৈধ পাসপোর্ট, চাকরির ভিসাধারী, শারীরিকভাবে ফিট এমন ব্যাক্তি এই লোনের আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হইবে।
প্রবাসী লোনের শর্তাবলী নিম্নরূপঃ
- ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা।
- সুদের হার ৯ শতাংশ (পরিবর্তন যোগ্য)।
- ১৮ থেকে ৪৫ মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
- মাসিক কিস্তি সুবিধা রয়েছে যা সেবিংস একাউন্ট থেকে কর্তন করা হবে।
- ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হিসেবে বাবা, মা, ভাই অথবা বোন থাকতে হবে।
- আবেদন কারীর বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর হতে হবে।
- বৈধ চাকরির ভিসা, পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, স্মার্ট কার্ড, এয়ার টিকেট, পর্যাপ্ত ট্রেনিং সহ সকল কাজগজ পত্র সম্পূর্ণ ও সঠিক থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন
গ্রিন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স
গ্রিন ব্যাংকিং হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ অর্জনের জন্য একধরণের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। পরিবেশ বান্ধব কারখানা নির্মাণ বা রক্ষনবেক্ষণ এর জন্য এই ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। সোলার সিস্টেম স্থাপন, বায়ো গ্যাস প্লান্ট নির্মাণ, হাইড্রো পাওয়ার প্লান্ট, এলইডি বাল্ব প্রোডাকশন, সোলার ব্যাটারি প্রসেসিং ইত্যাদি কাজের জন্য এই ধরনের ঋণ প্রদান করা হয়।
গ্রিন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স এর শর্তাবলীঃ
- মাসিক/ত্রৈমাসিক/বার্ষিক/অসমান কিস্তি সুবিধা।
- সুদের হার ৯ শতাংশ।
- সহজ লোন প্রসেস।
- জামানত, ব্যাক্তিগত গ্যারান্টি, কর্পোরেট গ্যারন্টি, পোস্ট ডেটেড চেক প্রয়োজন।
- পরিবেশ ভিত্তিক প্রযুক্তি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, শিল্প বা ব্যবসায় স্থাপনের জন্য এই ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়।
স্বল্পমেয়াদী এসএমই লোন
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সল্পমেয়াদী এসএমই লোন প্রদান করে। আপনি যদি একজন ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে সর্বোচ্চ তিন লাখ থাকা পর্যন্ত লোন পেতে পারেন।
অগ্রণী ব্যাংক এসএমই লোনের শর্তাবলী ও পাওয়ার যোগ্যতাঃ
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় বা শিল্প।
- তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে ব্যবসায়।
- সুদের হার ৯ শতাংশ।
- ব্যাক্তিগত গ্যারান্টার।
- ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স।
- ঋণ পরিশোধের সময়কাল সর্বোচ্চ দুই বছর।
অগ্রণী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা
অগ্রণী ব্যাংক থেকে লোন বা ঋণ সুবিধা পেতে আপনাকে কিছু শর্তাবলী ও নিয়মকানুন মানতে হবে। বাংলাদের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা নিম্নরূপ-
- ব্যাংক একাউন্ট।
- সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী বৈধ নাগরিক।
- লোন ভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
- ব্যাক্তিগত গ্যারান্টার বা জামানত। (সব লোনের জন্য প্রযোজ্য নয়)
লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
সহজ শর্তে অগ্রণী ব্যাংক লোন পেতে আপনার নিকটস্থ অগ্রণী ব্যাংকের যেকোন শাখায় ব্যাংকের লোন কর্মকর্তারার সাথে যোগাযোগ করুন। সব চেয়ে ভালো হয় ব্যাংকের যে শাখায় আপনার ব্যাংক একাউন্ট আছে সেখানে যোগাযোগ করুন। ব্যাংক থেকে একটি লোন আবেদন পত্র সংগ্রহ করুন। লোন ফরমটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিন।
এই লেখা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড-এ অনলাইনে লোন আবেদনের কোন অপশন চালু ছিলো না।
বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুনঃ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড লোন পদ্ধতি
সর্বশেষ
সম্মানিত ভিজিটর আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আমাদের লেখা নিয়ে আপনার কোন মতামত অভিযোগ, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। যোগাযোগ করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
আরও পড়ুনঃ সিটি ব্যাংক বাইক লোন সম্পর্ক।