কিভাবে কোঁকড়া চুলের যত্ন নিবেন? ছেলেদের কিংবা মেয়েদের কোঁকড়া চুল এ কি বা কোন ধোরণের শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন? কিভাবে সোজা করা যায়? প্রিয় ভিজিটর আপনিও যদি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
চুলের জন্য কতকিছু। তেল থেকে শুরু করে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্টস। তবে আমাদের এই সাইউথ এশিয়ার মেয়েদের দেখা যায় সুন্দর ও হেলথি চুল বলতে সোজা চুলকে বোঝে। কোঁকড়া চুল তাদের কাছে এক ধনের মাথা ব্যাথা। তবে সবাই যে কোঁকড়া চুল বা curly hairপছন্দ করে না তা কিন্তু নয়। অনেককে আবার বলতে শুনা যায় আহা আমার যদি কোঁকড়া চুল থাকতো বা আমার চুল গুলো যদি তোমার মতো কোঁকড়া হতো?
ফলে বেশিরভাগ যে কোঁকড়া বা ওয়েভি চুল নিয়ে জন্ম আর কোঁকড়া চুল পছন্দ করা না হয়েছে তারা হাজার হাজার টাকা খরচ করে চুল পারর্লার থেকে সোজা করে, বাসায় বিভিন্ন কেরাটিন প্রডাক্টস ও হেয়ার স্ট্রেইটনার দিয়ে চুলে তাপমাত্রা বেশি প্রয়োগ করে।
চুল আমাদের দেহেরই অংশ। তবে মুখের ত্বকের যত্ন কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের যত্নের সাথে চুলের যত্ন কেন পিছিয়ে থাকবে? আমরা বাঙালিরা বিশেষ করে মেয়েরা বেশিরভাগই কোঁকড়া চুল নিয়ে দুশ্চিন্তা করি। সবসময় মনে হয় সিল্কি সোজা চুলই সৌন্দর্য। এই ভ্রান্ত ধারণা ঠিক নয়। আমরা চাইলে আমাদের এই কোঁকড়া চুলকেই যত্ন করলে সুন্দর ভাবতে পারি। প্রচুর তাপে, কেমিক্যাল ব্যবহারে আমাদের চুলে ক্ষতি-কারক রাসায়নিক পদার্থ মিশার কারনে চুল পড়া, ভলিউম কমে যাওয়া ইত্যাদি সম্যসা দেখা দেয়। তাই চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। সেটা যেরকম চুলেরই বৈশিষ্ট্য হোক না কেন, কিছু কিছু পদক্ষেপ মেনে চললে চুলকে মজবুত ও হেলথি করা সম্ভব।
তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কোঁকড়া চুলের যত্ন নিবেন, কোঁকড়া চুল এর জন্য কোন কোন প্রডাক্ট, কোন ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার কবেন এবং কিভাবে, কি কি উপায় আপনারা চুলের যত্ন নিবেনঃ
১. কোঁকড়া চুলে যেসব শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেনঃ
প্রথমত কোঁকড়া চুল কিংবা স্ট্রেইট চুল কোন চুলেই প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ভালো না। সপ্তাহে ১দিন শ্যাম্পু করতে হবে। কোঁকড়া চুল এর জন্য সব শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবেও না শুধুমাত্র সাল্ফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ
হিমালয় হারবালস বেবি শ্যাম্পু, জন্সন্স হেড টু টো বেবি শ্যাম্পু, আভিনো ডেইলি বেবি কেয়ার ওয়াশ, আরগন ওয়েল শ্যাম্পু, রেইনফরেস্ট রেডিয়ান্স, মেহারস অরগেনিক শ্যাম্পু, ট্রেসেমি বোটানিক পমেগ্রান্ট ও কেমেলিয়া ওয়েল শ্যাম্পু ইত্যাদি। এসব মাইল্ড শ্যাম্পু সাল্ফেট ফ্রি, যা curly hair বা কোঁকড়া চুলের জন্য উপকারি। এগুলো কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া যায়। তাই জন্সন্স ও হিমালয় হারবালস যেসব বাচ্চাদের শ্যাম্পু রয়েছে ওগুলো চাইলে কম দামে কেনা যাবে এবং বাজারে সহজেই পাওয়া যাবে। কিন্তু শ্যাম্পু করার সময় পুরা চুলে এলোমেলো ভাবে ঘসলেই হবে না৷ মাথার তালুতে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. যেসব কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেনঃ
কোঁকড়া হোক বা সোজা, চুলের স্মুথনেস তো সবারই চাই। কন্ডিশনার ব্যবহার না করলে চুলে দেখা দেয় ফ্রিজিনেস ও শুষ্কতা। কোঁকড়া চুলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো কন্ডিশনার। তাই শ্যাম্পুর মতো এটাও যেকোনো প্রডাক্ট যে ব্যবহার করা যাবে তা নয়। এখানে খেয়াল রাখতে হবে কন্ডিশনার যেনো সিলিকোন ফ্রি হয়। কারণ সিলিকন হলো চুলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পদার্থ।
বাজারে প্রত্যেক কন্ডিশনারে দেখা যায় ডিমেথিকোণ দেওয়া। নামের শেষে “কোণ” লেখা থাকলেই বুঝে নিতে হবে সেটি হলো এক প্রকার সিলিকোন। এগুলোর দাম একটু বেশি হলেও চুলের যত্নে এরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ যেমনঃ বডি শপের বানানা কন্ডিশনার, এনলিভেন, আরগন ওয়েল, রেইনফরেস্ট ব্যালেন্স, ট্রেসেমি বোটানিক কোকোনাট ও এলোভেরা জেল, গারনিয়ার আল্টিমেট ব্লেন্ডস, ভিওফাইভ হারবালস ইত্যাদি। এগুলো একটু দাম এবং সহজে পাওয়া যায়না।
কিছু কিছু জায়গায় যেমন বড় বড় শপিং মলে পাওয়া যায়। তবে সিলিকোন ফ্রি দেখে কন্ডিশনার ব্যবহার করলেই হয়। সপ্তাহে ৫দিনই ব্যবহার করা ভালো যেহেতু কোঁকড়া চুলে অনেক বেশি দরকার হয় কন্ডিশনার। শুধুমাত্র চুলের জন্য, মাথার তালুতে ব্যবহার করা যাবেনা। শ্যাম্পুর পরেই কন্ডিশনার লাগাতে হবে এবং বাকি দিন গুলোতে এমনিতেই চুলে কন্ডিশনার লাগাতে হবে। কন্ডিশনার লাগালেই হবে না লাগানোর পর পুরো চুলকে হাতে মুঠো করে নিয়ে স্কুইজ করতে হবে। এতে করে চুলের ভলিউমটা বজায় থাকবে।
৩. ডিপ কন্ডিশনার যেসব ব্যবহার করবেনঃ
কোঁকড়া চুল এ শুধু কন্ডিশনার ব্যবহার করলেই চলবেনা তার সাথে সপ্তাহে ১ দিন ডিপ কন্ডিশনার ও ব্যবহার করা দরকার। এতে চুলে ময়শ্চরাইজ করতে সাহায্য করবে। চুলে ডিপ কন্ডিশনার দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে এটি ব্যাবহার এর জন্য প্রথমে গরম তেল মাথায় ম্যাসাজ করে, ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে তারপর লাগাতে হবে।
সুতরাং ওইদিন কোনো নরমাল কন্ডিশনার লাগানো যাবেনা। ডিপ কন্ডিশনারও মাত্র কিছু কিছু পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ গারনিয়ার আল্টিমেট ব্লেন্ডস বানানা, এলোভেরা, কোকোনাট অয়েল, কাঠবাদাম, পাপায়া বিভিন্ন ফ্লেভারের। এছারাও মেয়নিজ দিয়েও চুলে ডিপ কন্ডিশনার হিসেবে রাখা যাবে। আবার ফ্লেক্সসীড জাল দিয়েও আজকাল ডিপ কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আপনার চুল হবে হেলথি।
৪. কোঁকড়া চুল ধোয়ার পর চুল কি দিয়ে মুছবেন?
যে কোনো তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। নরম তোয়ালে কোঁকড়া চুলের জন্য ভালো। মাইক্রফাইবার তোয়ালে অথবা পুরোনো কোনো টিশার্ট দিয়ে চুল থেকে পানি ঝরিয়ে চুলে ওই টিশার্ট অথবা মাইক্রফাইবার তোয়ালে দিয়ে বেধে রাখতে হবে ১০-১৫ মিনিট। আপনি চাইলে গামছা দিয়েও রাখতে পারেন। কারণ যে কোনো তোয়ালে বা গামছা কোঁকড়া চুলের জন্য ক্ষতিকর। আবার চুল মুছার সাথে সাথে চুল আঁচড়ানো যাবে না। এতে করে চুলের গোড়া ভাঙবে এবং আস্তে আস্তে চুল পড়া শুরু হবে। আবার তাড়াহুড়ো তে চুলে ব্লো-ড্রাই বা আয়-রন করাও যাবে না।
৫. কোঁকড়া চুলের জন্য হেয়ার জেলঃ
চুলে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ডিপ কন্ডিশনার দেওয়ার পরও চুলের যত্ন শেষ হবেনা। এই ভিজা চুলেও হেয়ার জেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। বিশেষ করে ছেলেদের সেট ওয়েট হেয়ার জেল গুলো, হারবাল এসেন্স, এনলিভেন, ফ্লেক্সসীড ইত্যাদি দিয়ে চুলে হাল্কাভেবে ম্যাসাজ করে ক্লিপ্স দিয়ে আটকিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিয়ে ক্লিপ্স গুলি খুলে ফেলতে হবে। তাতে করে কোঁকড়া চুলের যে ভলিউম সেটা কমে আসবে না।
৬. চুল আঁচড়ানো যাবে কি যাবেনাঃ
কোঁকড়া চুলের প্রথম নিয়ম হলো চুল কোনোভাবেই আঁচড়ানো নিষেধ। হাতের আঙুল দিয়ে অথবা মোটা দাতের চিরুনি দিয়ে চুলের জট খুলতে হবে তাও সপ্তাহে ১-২ দিন। তা না হলে চুলে কোঁকড়া ভলিউমটা থাকবেনা। চুল অর্ধেক সোজা অর্ধেক কোঁকড়া আবার অর্ধেক মিশ্রিত দেখা যাবে। তাই এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। চুল পড়া থেকে এবং মসৃণ-তা বজায় রাখতে বালিশের কভারও সিল্ক স্যাটিনের ব্যবহার করা শ্রেয়। আবার রাতে ঘুমাবার আগে বেনী করে অথবা খোপা করে শুলে চুল পড়া থেকে বিরত থাকে। কাজেই চুল খোলা রেখে ঘুমানো ঠিক হবে না।
চুলের নিয়মিত পরিচর্যা কেন জরুরিঃ
প্রথমে চুলের যত্ন নিতে কষ্ট হলেও এভাবে নিয়মিত ভাবে মেনে চললে চুল হেলথি হবে এবং কোঁকড়া চুলকে ভালোবাসতেও শুরু করবেন। আর কারলি মেশিন কিনে তাপ দিয়ে চুলকে রাফ বানানোর প্রয়োজন হবে না। আপনার যদি এমন তরঙ্গ থাকে যেগুলিকে টিম করা যায় না, ঝাঁকুনি যা পরিচালনা করা যায় না, এবং যে চুলগুলি কেবল যেদিকে যেতে চায় তা দেখতে পেলে আপনাকে অল্প চুল কাটা উদ্ধারের প্রয়োজন হতে পারে। চুলের পরিপূর্ণভাবে যত্ন নিলে চুল পরিপাটি হয়ে থাকবে এবং আত্মবিশ্বাস কাজ করবে।
একটি পারসোনালিটি তৈরি হবে যে নিজের চুল কে আমরা কিভাবে ক্যারি করছি। এই কোঁকড়া চুলের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি কেই বলে সিজিএম (কার্লি গার্ল মেথড) যা বিশ্ব-এ অনেক দেশে প্রচলিত। এটি চুল কাটার একটি পদ্ধতি যা নারী এবং পুরুষদের তাদের চুলের প্রকৃত গঠনটি সুনির্দিষ্ট করতে এবং প্রাকৃতিক তরঙ্গ এবং কার্লকে সর্বাধিক করে তোলা।
মূলত, আপনার চুলের প্রকৃত কার্ল প্যাটার্নে পড়ার জন্য আপনার চুলের কী প্রয়োজন এবং আপনার চুলের জন্য এটি উভয়ই নিজেকে পুনরায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই সিস্টেমটি যে কারও জন্য কোঁকড়ানো চুল মুক্ত রাখতে চায় এবং গরমের সরঞ্জাম, শ্যাম্পু এবং নির্দিষ্ট চুলের উপাদানগুলির সাহায্যে চুল-গুলি ক্ষতিগ্রস্ত করা বন্ধ করে দিলে তাদের তরঙ্গ-গুলি কতদূর যেতে পারে ঠিক তা দেখতে সিস্টেমটি ভাল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সমতল বা খুব আলগা কার্ল এবং তরঙ্গ-গুলি পূর্ণ এবং আরও সংজ্ঞায়িত হতে পারে। তাই, আপনার জন্য কাজ করে এমন পণ্য-গুলি এবং রুটিন-গুলি একবার বের করার পরে, সিজিএম অনুসরণ করার ফলাফল-গুলি বেশ দুর্দান্ত হবে।
সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা কোঁকড়া চুল এর যত্ন নিয়ে আজকের মত এখানে শেষ করছি। কোঁকড়া চুল নিয়া আপনার কোন পরামর্শ থাকলে শেয়ার করতে পারেন আমাদের সাথে। আমাদের কাছে লিখতে কিংবা নিয়মিত বিউটি টিপস ও ট্রিকস পেতে ভিজিট করুন আপনাদের প্রিয় টিপসওয়ালী ডট কম ও আমাদের ফেসবুক পেজ।
আরও পড়ুনঃ
জাফরান এর ব্যবহার ও কিভাবে ফেস প্যাক তৈরি করবেন
—লিখেছেন নাশিতা তাসনীম