ওটমিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার আর এই ফাইবার আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে ওটমিল বা ওটসের পরিচিত অনেক কম।
বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলতে সকালের নাস্তায় ওটমিলের স্থান প্রথমদিকে। মূলত রান্নার নিয়ম সহজ ও অনেক বেশি পুষ্টিকর হওয়ায় এটি অনেকেরই পছন্দের। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এর অবস্থান বেশি। তবে এই খাবার একটি সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত।
সম্মানিত ভিজিটর, আজকের লেখাজুড়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ওটমিল বা ওটস কি, ওটমিলের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, মজাদার কয়েকটি রেসিপি ও রান্না করার নিয়ম, কোথায় ওটমিল কিনতে পাওয়া যায়, এর দাম সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে।
ওটমিল কি?
Oatmeal এর বাংলা অর্থ ওটমিল বা জইচূর্ণ যা ওটস নামেও পরিচিত। এটি গম পরিবারের একটি শস্য। ধারনা করা হয় প্রায় চার হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এর চাষ হয়ে আসছে। এক সময় এটি পশু খাদ্য হিসেবে পরিচিত থাকলেও উচ্চপুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর হওয়ার এটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এটি দিয়ে পুষ্টিকর বিস্কুট, কেক তৈরি করা হয়।
ওটমিলের পুষ্টিগুণ
ওটমিল বা ওটস শক্তিশালী বিটা-গ্লুকান, ফাইবার ও কার্বস এর অন্যতম উৎস। এছাড়া এতে অন্যান্য শস্যের চেয়ে তুলনামূলক বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। প্রতি ৭৮ গ্রাম শুকনো ওটমিলে রয়েছে- ৫২ গ্রাম কার্বস, ১৩ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফ্যাট, ৮ গ্রাম ফাইবার। ৩০৩ ক্যালরি।
ওটমিলের উপকারিতা
তো এ পর্যায়ে বিশ্বের বিখ্যাত সব হেলথ ম্যাগাজিন ও বিভিন্ন রিসার্চ এর সুত্র মতে ওটমিলের নানা উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
১. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে হৃদরোগ ও এতে মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। আর হৃদরোগের প্রধান কারন হিসেবে রক্তের কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়।
অনেক গবেষণায় দেখা যায় ওটমিলে থাকা বিটা-গ্লুকান ফাইবার শরীরে জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বেশ কার্যকরী। পাশাপাশি এটি খুদা কমায় ও পেট পরিষ্কার রাখে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি একসাথে এলডিএল জারন রোধে কাজ করে।
২. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রন উন্নত করে
বর্তমান সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস একটি কমন রোগে পরিনত হয়েছে। ওটস বা ওটমিলে থাকা ফাইবার বিটা-গ্লুকেন রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। বিশেষত যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। এছাড়াও এটি ইনসুলিন সংবেদনাশীলতা উন্নতি করে।
৩. ওজন কমাতে
ওটমিল অনেক ভারী খাবার আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওটস ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অনেক সময় ধরে পেটে থাকে। ফলে আপনার বার বার খুদা লাগে না। এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বেটা গ্লুকোন ও পেপটাইড আর এই দুই উপাদানই খুদা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন। ভাল ফলাফল পেটে সকালব্লেয়া নাস্তার সাথে এক বাটি ওটমিলের সাথে ২-৩ চামচ লো-ফ্যাট বা টক দই ও মধু এবং কয়েকটি ফল মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. স্কিনের সুরক্ষা
কোয়েলড ওটমিল অনেকদিন যাবত শুকনো এবং চুলকানির স্কিনের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি একজিমা, র্যাশ, কালো দাগ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। অনেক ফেসিয়াল ক্রিম, ফেস মাস্ক, ক্লিঞ্জার এ এর ব্যবহার দেখা যায়।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
পুষ্টিকর এই ওটমিলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার যা আপনার রক্ত চলাচলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে ও আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ওটমিল থাকলে এটি সিস্টোলিক ও ডায়স্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে।
৬ ওটমিলের অন্যান্য উপকারিতা
উপরে উল্লেখিত উপকারিতা ছাড়াও ওটমিলের নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। যেমন – মস্তিস্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে খুদা, মেজাজ ও ঘুম নিয়ন্ত্রন করে আপনাকে চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে ওটমিল বেশ কার্যকরী।
ওটমিল কিভাবে খায় বা খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম এর মতো বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অত্যন্ত পুষ্টিকর এই খাবারের যায়গা এখনো তৈরি হয় নি। তবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ কিছুটা হলেও এর দিকে এগিয়ে আসছে। আমাদের মধ্যে অনেকের জানা নেই যে কিভাবে ওটমিল খেতে হয়। চলুন ওটমিল খাওয়ার কয়েকটি জনপ্রিয় উপায় জেনে নেওয়া যাক-
ওটমিল খাওয়ার আলাদ কোন নিয়ম নেই। আপনি সকালের নাস্তায় দুপুরের খাবারে কিংবা বিকালের নাস্তায় এটি খেতে পারেন। এটি নানা রকম শুকনো ও তাজা ফল, মধু এবং দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন ড্রাই ফ্রুট, অতিরিক্ত চিনি, দুধ যোগ না করে খাওয়া উত্তম।
ওটমিল রেসিপি
সম্মানিত ভিজিটর, আপনি চাইলে বাসায় বসে ওটমিলের সাহায্যে নানা মজাদার রেসিপি তৈরি করতে পারেন। চলুন এপর্যায়ে ৫ টি মজাদার ও সুস্বাদু ওটমিল রেসিপি ও রান্না করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক-
১. ওটমিল খিচুড়ি রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ মুরগির মাংস ১ কাপ বা পরিমাণ মতো (হাড় ছাড়া), ১ কাপ ওটমিল, ১ কাপের ৪ ভাগের এক ভাগ মুগডাল, সাধ্যমত কয়েকটি সবজি মিলিয়ে ১ কাপ সবজি (না থাকলে আলু), ১ চামচ আদা বাটা, ১ চামচ রসুন ও ২-৩ চামচ পিঁয়াজ, ১/২ (হাফ) চামচ করে হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ১ চামচ মরিচের গুঁড়া (স্বাদ অনুযায়ী), দারুচিনি ১-২ টুকরো, ২ টেবিল চামচ তেল, ২ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি।
যেভাবে রান্না করবেনঃ প্রথমেই ওটমিলগুলো ভেজে নিন। কড়াই বা প্যানে তেল দিয়ে ভেজে নিন, ব্রাউন কালার হয়ে গেলে এতে পিঁয়াজ কুচি বা বাটা ও রসুন দিয়ে নেড়ে দিন। এর পড়ে বাকি মশলা ও সবজিগুলো দিয়ে মাঝারি তাপে ৩-৪ মিনিট ভাজুন। এবারে ডাল দিয়ে একটু নেড়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মিডিয়াম সিদ্ধ হলে ও পানি অর্ধেকের নিচে আসলে আগে ভেজে রাখা ওটমিল দিয়ে নেড়ে দিন। এবারে চুলার আচ কমিয়ে দিয়ে ঢেকে রাখুন। উঠানোর কিছু সময় আগে ধনে পাতা কুচি ছিটিয়ে দিন। রান্না হয়ে গেল ওটমিল খিচুরি।
২. ওটমিল বা ওটস পায়েস রেসিপি
অনেকেরই ওটমিলের পায়েস অনেক পছন্দের। এতে যেমনি পুষ্টিগুণ কয়েকগুন বেড়ে যায় পাশাপাশি অনেক বেশি সুস্বাদুও হয়। তো চলুন এ পর্যায়ে ওটমিল পায়েস রেসিপি ও রান্না করার নিয়ম জেনে নেওয়ায় যাক-
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ হাফ লিটার বা পরিমাণ মতো দুধ, ১ কাপ ওটমিল, স্বাদমতো লবন, ১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি, কয়েক প্রকার ফলমূল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আনার, আঙ্গুর, আপেল, কলা বা আপনার পছন্দের ফল) এক কাপ।
যেভাবে ওটমিল পায়েস রান্না করবেনঃ প্রথমে একটি প্যানে দুধ ও সামান্য পানি দিয়ে গরম করুন। সামান্য গরম হওয়ার পর এতে পরিমাণ মতো মধু বা চিনি দিয়ে দিন। দুধ ফোটা শুরু করলে এর মধ্যে ওটমিলগুলো দিয়ে দিন সাথে স্বাদ মতো লবন। সামান্য নেড়ে চুলার আচ কমিয়ে ঢেকে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন সব দুধ শুঁকিয়ে না যায়। ঘন হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার পর এর উপরে পছন্দের ফলগুলে ভাল করে ধুয়ে সাজিয়ে দিন। আর বেশি মজাদার করতে এই অবস্থায়ই ২০-২৫ ফ্রিজে রাখুন। হয়ে গেল আপনার পছন্দের সুস্বাদু ওটমিল পায়েস।
ওটমিলের দাম
বাংলাদেশের বাজারে ১ কেজি রোলড ওটমিলের দাম ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। তবে ইনস্ট্যান্ট ওটমিল এর দাম ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
কোথায় ওটমিল কিনতে পাওয়া যায়
বাংলাদেশের সুপার সপ ও অনলাইন শপগুলোতে ওটমিল কিনতে পাওয়া যায়। তবে কেনার আগে ভাল ভাবে খেয়াল করবেন এটা যেন পিউর ওটমিল বা ওটস হয়। কেননা মশলা ওটমিলের ব্যবহার আলাদা।
সর্বশেষ
সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা, ওটমিল বা ওটস অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী, কিংবা যারা ওজন কমাতে চাইছেন তাদের জন্য এটি হতে পারে অন্যতম একটি উপকারি খাবার। আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এটি যোগ করতে পারেন।
আমাদের লেখা নিয়ে আপনার কোন মতামত, পরামর্শ, কিংবা অভিযোগ থাকলে শেয়ার করুন আমাদের সাথে। লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন আপনার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে। কপি করা থেকে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ এলোভেরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।