ওভেন, খাবার গরম করা কিংবা ফাস্ট-ফুড, খাবার, কেক তৈরির জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি নাম। আমাদের দেশে মূলত ঠাণ্ডা খাবার গরম করার কাজে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কাজের ধরন ও কি পরিমান তাপ উৎপন্ন করতে পারে তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের ওভেন হয়ে থাকে। কিছু কিছু ওভেন সিরামিক ও মৃৎশিল্প ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেগুল সাধারণ ওভেনের তুলনায় আলাদা।
প্রিয় ভিজিটর, আজকের লেখা জুড়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো- ওভেন কি, ওভেনের প্রকারভেদ, বাসা কিংবা রেস্টুরেন্ট এর জন্য কোন ধরনের ওভেন ব্যবহার করবেন বা কিনবেন, বাংলাদেশের সেরা বা ভালো মানের কয়েকটি ওভেন, ওভেনের দাম, কেনার টিপস ও ব্যবহারের নিয়ম। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে বিস্তারিত।
ওভেন কি?
ইংরেজিতে Oven বা ওভেন যার বাংলা অর্থ হচ্ছে- চুলা, উনুন, তন্দুর। ওভেন হচ্ছে একটি টুলস যা কোন কিছু গরম করতে ব্যবহৃত হয়। ওভেনগুলিতে একটি ফাঁকা চেম্বার থাকে এবং নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চেম্বারটিতে তাপ উৎপন্ন করে খাবার বা কোন কিছু গরম করা হয়।
ওভেনের প্রকারভেদ
বাজারে মূলত ৫ প্রকারের ওভেন পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে যথাক্রমে- ১) প্রচলিত বা কনভেনিয়েন্ট ওভেন, ২) কনভেকসন, ৩) মাইক্রোওয়েভ, ৪) মাইক্রোওয়েভ কাম কনভেশন ওভেনস, এবং ৫) ওভেন টোস্টার গ্রিল (ওটিজি) ওভেন।
ইলেকট্রিক ওভেনের দাম
বাজারে বিভিন্ন দামের ইলেকট্রিক মাইক্রোওয়েব ওভেন কিনতে পাওয়া যায়। মূলত ফিচার ও ব্র্যান্ডভেদে এর দামের পার্থক্য হয়। বাংলাদেশে ইলেকট্রিক মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দাম ৳৫০০০ থেকে ৳২৫০০০। তবে বাজারে ৳৫০০০০+ দামেরও ইলেকট্রিক ওভেন রয়েছে।
৫ টি সেরা ও ভালো মানের ইলেকট্রিক ওভেন
বাজারে বিভিন্ন দামের ও ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক ওভেন পাওয়া যায়। সঠিক পন্য খুঁজে নেওয়া অতোটা সহজ কাজ না। আপনার কাজকে সহজ করতে আজকের লেখায় আমরা কয়েকটি ভালো মানের ও কম/বাজেট দামের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি ইলেকট্রিক ওভেন ও এদের দাম তুলে ধরা হলো-
1. Singer SMWG30G6 Microwave ওভেন
কনজুমার ইলেক্ট্রনিক্স এর বাজারে সিঙ্গার বাংলাদেশের বাজারে অতিপুরাতন ও পরিচিত মুখ। গুন ও মানের কারনে অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স এর মতো মাইক্রোওভেনও বেশ ভালো সুনাম করেছে এই ব্র্যান্ডটি। Singer SMWG30G6 Microwave Oven টির ধারন ক্ষমতা। প্রায় সবধরনের খাবারই রান্না করা যায় এর সাহায্যে। ষ্টীলের অবকাঠামোতে তৈরি এই মাইক্রোওভেনটিতে রয়েছে স্বচ্ছ গ্লাস ডোর ফলে বাহির থেকেই আপনি দেখতে পারবেন আপনার খাবারের অবস্থা কি। বাংলাদেশে সিঙ্গার এর অফিশিয়াল সাইটে এর দাম ধরা হয়েছে ৳১২৮৯০ তবে অফার প্রাইসে কিছুটা কম পেতে পারেন। বাজারে অনেক নকল পন্যও রয়েছে তাই কেনার সময় অবশ্যই অনুমোদিত শোরুম কিংবা ডিলার হতে কিনবেন।
2. Samsung M/W Oven 28L Convection
শুধু মাত্র মোবাইল ফোন কিংবা টিভি, ফ্রিজের বাজারে নয় কনজুমার ইলেক্ট্রনিক্স এর দুনিয়ায় স্যামসাং এর সুনাম ও অবস্থান যে কত শক্ত আমরা সবাইই কম বেশি জানি। বিশ্ব বিখ্যাত কোরিয়ান এই ইলেক্ট্রনিক্স ব্র্যান্ডটির Samsung M/W Oven 28L Convection টি দেখেতে পারেন। স্যামসাং M/W Oven এর ধারন ক্ষমতা ২৮ লিটার এবং শুধুমাত্র কালো কালারে পাওয়া যাবে এই ওভেনটি। কভেকশন তাপমাত্র ৪০ ডিগ্রি থেকে সর্বচ্চ ২০০ ডিগ্রি। থাকছে স্বচ্ছ গ্লাস ডোর। বাংলাদেশে স্যামসাং Samsung M/W Oven 28L Convection এর দাম ৳১৭,৯০০ মাত্র।
3. Sharp-R-72A1 Microwave Oven
জাপানি ব্র্যান্ড শার্প বাংলাদেশের বাজারে বেশি সুপরিচিত এর ব্লেড এর জন্য। বিটিভিতে দেওয়া শার্প ব্লেডের সেই চমৎকার বিজ্ঞাপন এখনও চোখে ভাসে। যাহোক, ২৫ লিটার ধারন খমতার এই মাঝারি সাইজের ওভেনটিতে রয়েছে পাওয়ারফুল গ্রিল ফাংশন। মোটামুটি সব ধরনের খাবারই এর সাহায্যে রান্না করা সম্ভব। বাংলাদেশে Sharp-R-72A1 Microwave Oven এর দাম ধরা হয়েছে ৳১৩,৯০০ মাত্র। বিভিন্ন অনলাইন শপগুলোতে অনেক পজিটিভ রিভিউ রয়েছে। বাংলাদেশে শার্প এর অনুমোদিত Esquire Electronics Ltd ডিলার। অবশ্যই সুপরিচিত কোন ইলেক্ট্রনিক্স এর শোরুম কিংবা অনলাইন শপ থেকে কিনতে পারেন।
4. Vision Micro Oven VSM 30L
সাম্প্রতিক সময়ে ইলেক্ট্রনিক্স ব্র্যান্ড দিয়ে ভিশন ইলেক্ট্রনিক্সও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ৩০ লিটার ধারন ক্ষমতার এই ইলেকট্রিক মাইক্রো ওভেন টিতে থাকছে ১০ অটোম্যাটিক পাওয়ার লেভেল, মিরির গ্লাস ডোর, ৯৫ মিনিট কুকিং টাইমার। বাংলাদেশের বাজারে ভিশন মাইক্রো ওভেন VSM 30L এর মুল্য ধরা হয়েছে ৳১৬,৯০০ মাত্র। প্রায় সব ধরনের খবারই এর সাহায্য গরম ও রান্না করা যায়।
5. Walton WMWO-WG30ESLR Microwave Oven
দেশী ব্র্যান্ড ওয়াল্টনও কিন্তু এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স এর পাশাপাশি ওয়াল্টন ওভেনেও বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। বাজারে ওয়াল্টনের বেশ কয়েকটি ইলেকট্রিক মাইক্রোওভেন পাওয়া যায়। এদের মধ্যে Walton WMWO-WG30ESLR Microwave Oven টি দেখতে পারেন। ওয়াল্টনের ই-প্লাজায় অর্থাৎ অনলাইন শপে এর মুল্য ধরা হয়ছে ৳১৮,১০০ মাত্র। এর ধারন ক্ষমতা ৩০ লিটার থাকছে মাইক্রোওয়েভ, গ্রিল, কম্বিনেশন, এবং কনভেকশন ফাংশন।
ওভেন কেনার গাইড বা যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত
বাসা কিংবা রেস্টুরেন্ট এর জন্য ওভেন কেনার আগে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যেমন- সাইজ, ধরন, বাজেট, কালার, ডাবল না সিঙ্গেল ওভেন ইত্যাদি। নিচে ওভেন কেনার সময় বিশেষ কিছু গাইডলাইন ও টিপস বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
১) ওভেন এর ধরন – বৈদ্যুতিক নাকি গ্যাসের
বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসে চালিত ও ইলেকট্রিক ওভেন কিনতে পাওয়া যায়। ওভেন কেনার আগে আপনাকে খুজে বের করতে হবে আপনার জন্য কি ধরনের ওভেন পারফেক্ট। গ্যাসের ওভেনের দাম বেশি কিন্তু পরবর্তী খরচ কম অর্থাৎ জ্বালানি খরচ কম। অন্যদিকে, ইলেকট্রিক ওভেনের দাম কম তবে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাজারে ইলেকট্রিক মাইক্রো ওভেনের চাহিদা বেশি।
২) বাজেট
অনেক টাকা? তাহলে ভাই আমার কোন কথা নাই। এই প্যারাগ্রাফটা স্কিপ করতে পারেন। আর আমার মতো সাল্কা টাকা পয়সা থাকলে বাজেট বেসম্ভব একটা বিষয়। আপনি কি বাজেটের মধ্যে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে চাইছেন সেটি ফিক্স করুন। কারন বাজারে গেলে আপনি নানা বাহারি ডিজাইন ও মডেলের পন্য দেখতে পাবেন আর এতে আপনার মন চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। আপনার বাজেটের মধ্য সেরা পন্যটি খুজে বের করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি খুব বেশি কোন কিছু ব্যবহার না করেন তবে অনেক বেশি টাকা দিয়ে কোন কিছু কিনে টাকা খাটিয়ে রাখার কোন মানে নেই।
৩) কালার
বাসায় ব্যবহারের জন্য কোন কিছু কিনতে গেলে এর কালার কেমন হবে এ নিয়ে সবারই কম বেশি মাথা ব্যাথা থাকে। তাই আপনার প্রয়োজনীয় পন্যটি কেনার আগে খেয়লা করুন আপনার বাসার কিচেন যদি সাদা টাইল করা হয় তবে কালো কালারের ওভেন কেনা বেটার এর। আবার ধুসর কালারেরও কিনতে পারেন। বিক্রেতাদের মতে বাজারে গোল্ড ও কপার কালারের ইলেকট্রিক ওভেনগুলোর চাহিদা বেশি।
৪) ডাবল নাকি সিঙ্গেল ওভেন
কুল! রিলেশনশিপের কথা বলছি না। বলছি বাজারে সিঙ্গেল ডাবল দুই ধরনের ইলেকট্রিক ওভেন কিনতে পাওয়া যায়। প্রথমে আপনার প্রয়োজনের কথা ভাবুন। আপনি অনেক বেশি ওভেন ব্যবহার করবেন নাকি মাঝে মাঝে খাবার গরম করার কাজে ব্যবহার করবেন? যদি মাঝে মাঝে ব্যবহার করা লাগে বিশেষ করে বাসা কিংবা অফিসের জন্য হলে সিঙ্গেলগুলো কেনাই উত্তম। আর আপনি যদি রেস্টুরেন্ট এর জন্য কিনেন তবে ডাবলগুলো কেনা উত্তম। ডাবল ওভেনে বেশি স্পেস থাকে তাই আপনি যদি কোন খাবার রান্না করতে চান বিশেষ করে কেক জাতীয় তবে ডাবলগুলো কেনা ভালো।
৫) ওভেন এর সাইজ
সাইজ কোন বিষয় না সব সময় কিন্তু এই কথা কাজে আসে না। এই যেমন আপনি যদি চিকন পিন আর চ্যাপ্টা পিনের চার্জারের কথাই বলেন। একটা দিয়ে আরেকটার কাজ হয় না। আপনার বাসার কিচেনে কিংবা রেস্টুরেন্টে ওভেন বসানোর জন্য কি পরিমান স্পেস আছে সে বিষয়টি মাথায় রাখুন। আকারে একটু ছোট হলে চালিয়ে দেওয়া যায় তবে আপনি যা রান্না করতে বা গরম করতে চাইছে তার পরিমান একটু বেশি হলে আপনাকে কয়েকবারে আপনার কাজ শেষ করতে হবে। আবার আকারে বেশি হলে ওভেন সেট করার জন্য কম জায়গা থাকলে ঠিকমতো প্লেস করতে সমস্যায় পরতে হয়। তাহলে কি বুজলেন সাইজ আসলেই ম্যাটার।
ইলেকট্রিক ওভেন ব্যবহারের বা চালানোর নিয়ম ও টিপস
সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সঠিক নিয়ম না মেনে ইলেকট্রিক ওভেন ব্যভার করলে আপনার কিচেনের এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন ইলেকট্রিক মাইক্রো ওভেন ব্যবহারের কিছু নিয়ম ও টিপস জেনে নেওয়া যাক-
১) ঢাকনা ব্যবহার করুন
সব সময় মনে রাখবেন ইলেকট্রিক মাইক্রো ওভেনে কিছু রান্না বা গরম করতে অবশ্যই ঢাকনাওয়ালা পাত্র ব্যবহার করুন।
২) হাতে গ্লাভস পড়ুন
ওভেনে খাবার গরম করতে গিয়ে হাতে ছেঁকা লাগা একটি কমন বিষয়। এর ফলে আপনার হাতে ফোস্কা পড়া কিংবা স্কিনে দাগ হয়ে যেতে পারে। আর অসহ্য যন্ত্রণাতো বোনাস। এর কারন হচ্ছে ওভেনের মধ্যে খাবারের সাথে যে পাত্রে খাবার গরম করতে দেওয়া হয় সেটিও গরম হয়ে যায়। তাই এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হাতে গ্লাভস পড়ে নিন।
৩) ধাতব পাত্র এড়িয়ে চলুন
অনেকেই ওভেনে খাবার গরম করার সময় ষ্টীলের বাটি কিংবা প্লেট, চামচ ব্যবহার করে থাকে। এই ধরনের পাত্রে খাবার গরম করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৪) এই সকল জিনিস গরম না করা উত্তম
মনের ভুলেও শুকনো মরিচ ডিম, আস্ত সবজি কিংবা ফল ওভেনে না দেওয়ার পরামর্শ রইলো। কারন এগুলোর বেশিরভাগই বেশি গরম হয়ে গেলে ফুটে উঠতে পারে। আর এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৫) ঠাণ্ডা খাবার
মূলত ঠাণ্ডা খাবার গরম করার জন্য আমরা ওভেন ব্যবহার করে থাকি। তবে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে সাথে সাথে কিংবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার ওভেনে দিলে আপনার খাবারের মান নষ্ট হয়ে যাবে। নরমল তাপমাত্রায় এনে খাবার গরম করুন।
৬) প্যাকেট
রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে প্যাকেটে কিংবা কাগজ, পলিব্যাগ, বা রেস্টুরেন্ট থেকে দেওয়া কোন বক্সে করে খাবার ওভেনে গরম করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মোড়ানো ফয়েল পেপারেও না।
৭) নিয়মিত ওভেন পরিষ্কার করুন
নিয়মিত ওভেন পরিষ্কার না করলে এতে খাবার পচে বা ব্যাকটেরিয়া জমে দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। প্রতিবার ব্যবহার শেষে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করুন। ও হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। পরিষ্কার করার কাজে আপনি চাইলে সাদা ভিনেগারও ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। ইলেক্ট্রনিক মাইক্রো ওভেন নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত ও পরামর্শ থাকলে সেয়ার করুন আমাদের সাথে। লেখটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের মাঝে।
বাংলাভাষায় টিপস-ট্রিকস ও প্রোডাক্ট রিভিউ পড়তে নিয়মিত ভিজিত করুন আপনাদের প্রিয় টিপসওয়ালী ডট কম।
আরও পড়ুনঃ আয়রন কেনার টিপস ও ব্যবহারের নিয়ম, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।