Sago যার বাংলা অর্থ সাবু, সাবুদানা, সাগু। দেখতে সাদা ছোট গোল গোল দানা সাবু বা সাবুদানা (Sagudana) অনেকের কাছে সাগু নামেও পরিচিত। আপনারা যারা ফালুদা খেয়েছেন বা নিয়মিত খান তারা এই সাবুদানা বা সাগু চিনে থাকবেন। তবে আমাদের অনেকেরই জানা নেই যে কিভাবে এটি তৈরি হয়, গোল গোল সাদা সাবুদানা কি গাছে ধরে না কি মেশিনের সাহায্যে তৈরি হয়।
প্রিয় ভিজিটর, আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো- সাগু বা সাবুদানা কি, সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয়, পুষ্টিগুণ, খাওয়ার উপকারিতা, বিভিন্ন রেসিপি, দাম, কোথায় কিনতে পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত।
Table of Contents
- সাবুদানা কি?
- সাবুদানার পুষ্টিগুণ
- সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা
- সাবুদানার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- সাবুদানা রেসিপি
- সাবু সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর
- সর্বশেষ
সাবুদানা কি?
সাবু বা সাগু হচ্ছে এক ধরণের স্টার্চ যা কিছু কিছু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় জন্মানো পাম গাছের কাণ্ডের ভেতরের নরম স্পঞ্জের মতো অংশ থেকে নিষ্কাশন করা হয়। এই স্টার্চগুলি জটিল কার্বোহাইড্রেট যা অনেকগুলো সংযুক্ত গ্লুকোজ অণু নিয়ে গঠিত হয়। সাগো পাম অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রায় সকল ধরণের মাটিতেই জন্মায়। একটি সাগো পামে ২২০ থেকে ১৭৬০ পাউন্ড পর্যন্ত স্টার্চ থাকতে পারে।
সাবুদানার পুষ্টিগুণ
সাবু বা সাগু মূলত একধরনের কার্ব। এতে প্রায় অল্প মাত্রায় প্রোটিন, চর্বি, ফাইবার ও ভিটামিন থাকে। সাবুর পুষ্টিগুণঃ প্রতি ১০০ গ্রাম সাবুদানায় ৩৩২ ক্যালোরি, ১ গ্রামের কম প্রোটিন, ১ গ্রামের কম চর্বি, ৮৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রামের কম ফাইবার, ১১% (RDI) জিঙ্ক থাকে।
সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা
সাগু বা সাবুদানা খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। প্রিয় ভিজিটর, চলুন এ পর্যায়ে সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা আছে। তবুও আবারও স্মরণ করিয়ে দেই। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মূলত আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। যা আমাদের স্বাস্থ্যবান করে তোলার পাশাপাশি, ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হার্টের উন্নতি করে থাকে।
২. কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
অনেক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে ওয়ার্কআউট করার আগে নিয়মিত সাবুদানা খেলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিপায়। কার্বোহাইড্রেটের চমৎকার উৎস সাবু আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে। এছাড়া গবেষণায় বলা হয়েছে ব্যায়াম করার সময় সাগু যুক্ত পানি পান করলে ক্লান্তি কমে যায়।
৩. ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত ওজন হওয়া যেমন অসুবিধার তেমনি ওজন কম হলেও শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। যাদের ওজন কম এবং ওজন বাড়ানোর উপায় খুঁজছেন তারা নিয়মিত সাগুদানা গ্রহণ করতে পারেন। সাবুদানা আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাট টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে এবং সারা শরীরে অভিন্ন লিপিড বিতরন নিশ্চিত করে।
৪. সাবুদানা প্রতিরোধী স্টার্চের উৎস
সাগু আনুমানিক ৭.৫% প্রতিরোধী স্টার্চ যা আপনার পাচনতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যায় কিন্তু হজম হয় না। আর এই স্টার্চ কলনে পৌঁছে আপনার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে।
৫. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে
সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সাবুদানায় রয়েছে এমিলস যা মূলত একধরণের শর্করা আর এই এমিলস লিনিয়ার চেইনযুক্ত এক প্রকার গ্লুকোজ যা হজম হতে তুলনামূলক বেশি সময় নেয়।
সাবুদানার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সাগু বা সাবুদানা খাওয়ার ফলে তেমন কোন অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে প্রক্রিয়াকরনের আগে সাবু খাওয়ার ফলে বমি, লিভারের ক্তি, এমনকি মৃত্যু হতে পারে। তাই সরাসরি সাগুপাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন বা নিয়মিত কোন ওষুধ সেবন করে তবে এটি খাওয়া আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সাবুদানা রেসিপি
প্রিয় ভিজিটর, এপর্যায়ে চলুন সাবুর কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি ও রান্না করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক:
১) সাবুর পায়েস তৈরির রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরন:
দুধ ১ লিটার, দেড় কাপ চিনি, লবন স্বাদ মতো, তিন টুকরা দারুচিনি, এলাচ, ১৪/১৫ টি কিচমিচ, পরিমাণ মতো পানি।
রান্না করার নিয়ম:
প্রথমে একটা পাতিলে দুধ নিব সাথে সামান্য পরিমাণ পানি যোগ করবো দুধ টগবগ করে ফুঠে উঠা পর্যন্ত গরম করে নিতে থাকবো মাঝে মাঝে নেড়ে দিব। দুধ টগবগ করে ফুটে উঠলে এর মধ্যে সাবুদানা ডেলে দিয়ে চুলার জাল মাঝারি অবস্তায় রেখে সাত থেকে আট মিনিট পর্যন্ত নাড়তে থাকবো। সাত থেকে আট মিনিট হয়ে গেলে আর মধ্যে দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা ও পরিমাণ মতো লবন দিয়ে দিব। সাবুদানা যতক্ষণ পর্যন্ত সিদ্ধ না হয় ততোক্ষণ পর্যন্ত রান্নার পাতিল টি একটা ঢাকনা দিয়ে ১০/১২ ঢেকে রাখব তবে অবশ্যই মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে নাহলে পাতিলে লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। ১০/১২ মিনিট হয়ে গেলে এর সাথে চিনি যোগ করে মিশিয়ে দিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিচ্রেখে দিব। এরপর কিসমিস দিয়ে দুই থেক তিন মিনিটের মতো জাল দিলে পায়েস হয়ে যাবে পায়েস হয়ে গেলে ঠাণ্ডা করে নামিয়ে নিব।
২) সাবুর খিচুড়ি রেসিপি
সাগু খিচুরি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন:
দেড়শ গ্রাম সাবুর খিচুড়ি রান্না করতে যে সকল উপকরণ প্রয়জন তাহল- ১ কাপ সোনা মুগডাল, আলু, বিভিন্ন প্রকার সবজি, হাফ চা চামচ করে জিরা ও ধনে গুঁড়া, সামান্য পরিমাণ চিনি, শুকনা মরিচ, তেজ পাতা, আদা কুচি, পরিমাণ মতো লবন ও সামান্য পরিমাণ পাঁচ ফোঁড়ন।
সাবুর খিচুরি রান্না করার নিয়ম:
সাবু গুলো প্রথমে দুয়ে বিজিয়ে রাখতে হবে এবং ডালগুলো কিছুখন ভেজে নিয়ে ডালটা ধুয়ে ফেলতে হবে এরপর একটা পেশার কুকারে হাফ লিটার পানি দিয়ে ডাল ও ১ চা চামচ লবন দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে যতক্ষণ না পেশার কুকারের একটা সিটি বাজে। ডালটা সিদ্ধ হলে একটা কড়াইতে দুই টেবিল চামচ সরিষার তেল নিন। তেলটা গরম হলে এর মধ্যে ২ টা শুকনা মরিচ, সামান্য পাঁচ ফোঁড়ন, তেজপাতা, আদা কুচি দিয়ে ভেজে নিবো যতক্ষণ না আদা লালচে রঙ ধারন করে। আদা ভাজা হয়ে গেলে এর মধ্যে আলু, সবজি , হাফ চা চামচ হলুদ ও পরিমাণ মতো লবন দিয়ে ভেজে নিন, ভাজা হয়ে গেলে এর মধ্যে সাবু গুলো দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে পরিমান মতো পানি দিয়ে ৩/৪ মিনিট পর সিদ্ধ করা ডাল, ১ চা চামচ মরিচের গুঁড়া, ১ চা চামচ চিনি (প্রয়জন মতো), জিরে গুঁড়া ও ধোনে গুঁড়া সবগুলো দিয়ে চুলার জাল কমিয়ে ৫/৭ মিনিট রেখে দিতে হবে। তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে সাবুর খিচুরি।
৩) বাচ্চাদের জন্য সাবু
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
বাচ্চাদের সাবু রান্না করতে যা যা প্রয়জন তা হল- ১ টেবিল চামচ সাবু দানা, দুধ, বাদামের গুঁড়া, সামান্য লবন।
বাচ্চাদের জন্য সাবু রান্না করার নিয়ম:
সবার প্রথমে একটি বাটিতে করে সাবুদানা ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ধুয়ে নেওয়া সাবু একটা পাতিলে দুই কাপ পরিমাণ পানি নিয়ে সাবুদানা ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হবে যতক্ষণ না সাবুর সাদা অংশটা বুঝা যায়। ঠিক মতো সিদ্ধ হলে ঠাণ্ডা করে উঠিয়ে একটা বাটিতে ঢেলে নিয়ে সাবুর ভিতর পরিমাণ মতো লবন ও দুধ, ১ চা চামচ বাদামের গুঁড়া মিশ্রিত করলেই বাচ্চাদের খাবার উপযোগী সাবু তৈরি হয়ে যাবে।
৪) সাবুর শরবত
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
সাবুদানার শরবত তৈরিতে আমাদের যেসকল উপকরন প্রয়জন হবে তাহল- হাফ কাফ পরিমাণ সাবুদানা, পরিমাণ মতো চিনি, লেবু বা ট্যাং।
যে ভাবে সাবুর শরবত তৈরি করবেন:
প্রথমে সাবুদানা গুলে ধুয়ে একটা পাতিলে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিবেন যতক্ষণ না সাবু দানার সাদা অবস্থাটা না যায়। সাবুর দানা সিদ্ধ হলে একটা জালির মাধ্যমে ছেঁকে নিতে হবে। এর পর একটা বলে দুই গ্লাস পরিমাণ পানি নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো চিনি, ট্যাং বা লেবু মিশিয়ে নিয়ে সিদ্ধ সাবুর দানা গুলো দিয়ে দিতে হবে তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু সাবুর শরবত।
সাবু সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর
১ কেজি সাগু বা সাবুদানার দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইন শপে সাগু বা সাবুদানা কিনতে পাওয়া যায়।
একধরনের পাম গাছের মূল থেকে রস নিঃসরণ করে শুকিয়ে ময়দার মত তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট দানায় পরিনিত করা হয়।
সর্বশেষ
সম্মানিত ভিজিটর, আশা করছি সাবুদানা বা সাগু সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। আমাদের লেখানিয়ে আপনার কোন মতামত কিংবা প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমাদের কাছে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুনঃ তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা।