https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/10/ahsan-manzil-museum.jpg

আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের ইসলামপুরের কুমারটুলি এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত অন্যতম একটি প্রাচীন নিদর্শন (রাজ প্রাসাদ)।

প্রিয় ভিজিটর, আজকের লেখাজুড়ে আলোচনা করবো আহসান মঞ্জিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, প্রবেশের সময়সূচী, কোন কোন দিনবন্ধ থাকবে, টিকেটের মূল্য, কিভাবে যাবেন এবং আহসান মঞ্জিল সম্পর্কিত অনন্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

Table of Contents

আহসান মঞ্জিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ইতিহাসবিদদের মতে ১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ তৎকালীন ফরাসিদের নিকট হতে একটি কুটির বাড়ি কিনে নেয় এবং এর প্রয়োজনীয় মেরামত করেন। এই কুটির বাড়ি কে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গনি মারটিন অ্যান্ড কোম্পানিকে দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেন যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিলের মতো। এই আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৭২ সালে। খাজা আব্দুল গনি তার পুত্র আহসানুল্লাহর নাম অনুসারে এর নাম করন করা হয় আহসান মঞ্জিল। ১৮৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ফলে এই প্রাসাদের বাপক ক্ষতি হলে নওয়াব আহসানুল্লাহ এর মেরামত করেন। আর এই সময় আহসান মঞ্জিলের উপরে যে সুন্দর গম্বুজ রয়েছে সেটির সংযোজন করা হয়েছে। ভূমি থেকে আহসান মঞ্জিলের এই গম্বুজের উচ্চতা প্রায় ২৭ মিটার। দেশ স্বাধীনের অনেক বছর পর ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিলে কি কি দেখতে পাবেন?

আহসান মঞ্জিলের ভিতরে মোট ২৩ টি কক্ষ রয়েছে এবং এই ২৩ টি কক্ষে প্রায় ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আহসান মঞ্জিলের কোন কক্ষে কি কি দেখতে পাওয়া যাবে-

১ম কক্ষ

আহসান মঞ্জিলের ভিতরের ১ম কক্ষে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, এবং এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংস্কারের চিত্র দেখতে পারবো।

২য় কক্ষ

আহসান মঞ্জিলের ভবনের সাথে জড়িত ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্য, আদি স্থাপত্যের নানা বৈশিষ্ট্য ও এর বিবর্তিত রূপ। এবং এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংস্কারের নানা চিত্র দেখতে পাওয়া যাবে।

৩য় কক্ষ

৩য় কক্ষটি মূলত নবাবদের ভোজন কক্ষ এখনে নওয়াবদের ব্যবহৃত চেয়ার, টেবিল, লাইট , আলমারি, আয়না, কাচ ও চিনামাটির জিনিস পত্র ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে।

৪র্থ কক্ষ

এই কক্ষে দোতালায় উঠানামার জন্য একটি বিশাল কাঠের সিড়ি রয়েছে। এছাড়াও এই কক্ষে হাতির মাথা, ঢাল-তরবারি ইত্যাদি দেখা যাবে।

৫ম কক্ষ

৫ম কক্ষেএকটি সুন্দর নকশা করা কাঠের সিঁড়ি ও বর্শা-বল্লম, ঢাল-তলোয়ার ইত্যাদি দেখতে পারবে।

৬ষ্ঠ কক্ষ

১৯৩৫ সালে টিকাটুলিতে স্যার আহসানুল্লহ মেমোরিয়াল হসপিটাল নামে একটি হাসপাতাল চালু হয় কিন্তু এটি ১৯৪০ সালে বন্ধ হয়ে যায়, উক্ত হাসপাতালের বেশ কিছু সরঞ্জামাদি ও খাতা পত্র এখানে দেখতে পারবো।

৭ম কক্ষ

এখানে মূলত বিচার কাজ পরিচালনা করা হতো। এই কক্ষে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মুসলিম নেতৃবিন্দের একটি বড় তৈলচিত্র ও একটি সুন্দর অষ্টকোন টেবিলের উপর দেখতে পারবো।

৮ম কক্ষ

আহসান মঞ্জিলের ৮ম কক্ষে ১৯০৪ সালের তোলা ছবি অনুযায়ী সাজানো টেবিল, লাইট, সোফা ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও এডওয়ার্ড থাকে সংগৃহীত জীব-জন্তুর শিং দেখতে পাওয়া যাবে।

৯ম কক্ষে

৯ম কক্ষে নওয়াবদের ব্যবহৃত বৃহৎ লোহার সিন্দুক ও কাঠের আলমারি দেখতে পাবে।

১০ম কক্ষ

এই কক্ষে তৎকালীন সময়ের নবাব পরিবারের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের নাম ও এর পাশাপাশি তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনীও দেখতে পারবে।

১১তম কক্ষ

১১তম কক্ষে সমসাময়িকালে দেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, বুদ্ধিজীবী, সমাজ সংস্কারক, কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন নিদর্শন এখানে দেখতে পারবো।

১২তম কক্ষ

১২তম কক্ষে ঢাকার নওয়াব সলিমুল্লাহ এর জীবনের বিভিন্ন আলোক চিত্র ও তথ্যাদি সম্পর্কে জানতে পাওয়া যাবে।

১৩তম কক্ষ

প্রাসাদের ১৩তম কক্ষে ১১তম কক্ষের মতো অনুরুপ বিষয়াবলি ও নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে।

১৪তম কক্ষ

আহসান মঞ্জিলের ১৪তম কক্ষ মূলত হিন্দুস্থানি কক্ষ হিসাবে পরিচিত। এই কক্ষটি ১৯০৪ সালের ফ্রিতজকাপের তোলা আলকচিত্রের সাথে মিল রেখে সাজানো হয়েছে।

১৫তম কক্ষ

১৫তম কক্ষে মূলত নিচ তলা থেকে উপর তলায় উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি ও এর নিখুঁত নকশা দেখতে পারবে।

১৬তম কক্ষ

১৬তম কক্ষে নওয়াবদের আইন, বিচার, উপন্যাস ও ক্রিয়া বিষয়ক বিভিন্ন রকমের বই এখানে দেখতে পারবে। ১৭তম কক্ষ মূলত নওয়াবদের তাস খেলার কক্ষ, এই কক্ষটি সে সময়ের তাস খেলাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে।

১৮তম কক্ষ

১৮তম কক্ষে তৎকালীন সময়ের নওয়াবগনের ঢাকায় পানি সরবরাহের বিভিন্ন নিদর্শন ও তথ্য গালারিতে সাজানো দেখতে পাওয়া যাবে।

১৯তম কক্ষ

আহসান মঞ্জিল এর ১৯তম কক্ষটি মূলত রাজকীয় অতিথিদের বিশ্রামের জন্য , এ কক্ষটি স্টেট বেডরুমে সাজানো দেখতে পারবে।

২০তম কক্ষ

২০তম কক্ষে নওয়াবদের প্রথম ঢাকায় বিদ্যুৎ আনার যে বিষয়টি তার বিভিন্ন নিদর্শন ও এই সম্পর্কিত নানা তথ্য চিত্র দিয়ে সাজানো।

২১তম কক্ষ

২১তম কক্ষে মূলত তৎকালীন সময়ে প্রসাদের অতিথিদের বরন করে নেওয়া হতো। পাশাপাশি আহসান মঞ্জিলের ২১তম কক্ষে তখনকার সময়ের ফুলদানি, ঝাড়বাতি ও লাইট দেখতে পাওয়া যাবে।

২২তম

আহসান মঞ্জিলের এই কক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন অস্ত্র ও বুড়িগঙ্গার প্রকিতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

২৩তম

সর্বশেষ কক্ষটি অর্থাৎ ২৩তম কক্ষটি মূলত বিনোদনের জন্য জলসা বা নাচ ঘর ছিল। এই কক্ষে তখনকার সময় সময়ে নৃত্য পরিবেশন ও নবাব ও রাজকীয় অতিথিদের নাচ উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখতে পাওয়া যাবে।

আহসান মঞ্জিলের সময়সূচী

আহসান মঞ্জিলের সময়সূচী নিচে দেওয়া হলঃ

দিনসময়সূচী
শনিবার সকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকাল ৫:৩০ টা
রবিবারসকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকাল ৫:৩০ টা
সোমবার সকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকাল ৫:৩০ টা
মঙ্গলবারসকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকাল ৫:৩০ টা
বুধবারসকাল ১০:৩০ টা থেকে বিকাল ৫:৩০ টা
বৃহস্পতিবারবন্ধ
শুক্রবারবিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা
আহসান মঞ্জিলের সময়সূচী

আহসান মঞ্জিল বন্ধের দিন

সকল সরকারি ছুটির দিন ও প্রতি বৃহস্পতিবার আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।

আহসান মঞ্জিল টিকেট মূল্য

আহসান মঞ্জিলের টিকেটের দাম নিচে দেওয়া হলঃ

শ্রেণী টিকেট মূল্য
শিশু (১২ বছরের নিচে)১০ টাকা
প্রাপ্ত বয়স্ক২০ টাকা
বিদেশী পর্যটক১০০ টাকা
প্রতিবন্ধীফ্রি (০০ টাকা)
আহসান মঞ্জিলের টিকেট মুল্য

আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাব

বাংলাদেশের বা ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সদরঘাট বা গুলিস্থান এসে ৪০-৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে কিংবা পায়ে হেটে আহসান মঞ্জিল যেতে পারেন। যারা গুলিস্থান নামবেন তারা গুলিস্থানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবু বাজার ব্রিজ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে ইসলামপুর পৌঁছে যাবেন। আর ইসলামপুর গেলে যে কাউকে জিজ্ঞাস করলে আহসান মঞ্জিল যাওয়ার রাস্তার কথা বলে দিতে পারবে। আবার আপনি চাইলে গুলিস্থান বা নিউমার্কেট এলাকা থেকে থেকেও সিএনজি বা রিকশায় চড়ে সোজা আহসান মঞ্জিল ঘুরতে যেতে পারেন।

আহসান মঞ্জিল সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

আহসান মঞ্জিল কে তৈরি করেন?

নওয়াব আবদুল গনি আহসান মঞ্জিল নির্মাণ শুরু করেন এবং তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামে এই প্রাসাদের নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল।

কত সালে আহসান মঞ্জিল তৈরি করা হয়?

১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিল নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৮৭২ সালে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।

সর্বশেষ

আশা করছি আহসান মঞ্জিল নিয়ে আমাদের লেখাটি আপনি উপভোগ করবেন। আমাদের লেখা নিয়ে আপনার কোন মতামত কিংবা পরামর্শ লিখে জানাতে পারেন আমাদের।

টিপসওয়ালী ডট কম এ প্রকাশিত অন্যান্য দর্শনীয়স্থান ও ভ্রমন গাইড পড়তে ক্লিক করুন এখানে।