সুস্থ ত্বকের যত্নে সবচেয়ে দরকারি হল ত্বক পরিস্কার রাখা, আর এর জন্য প্রয়োজন ফেসওয়াশ বা ক্লিন্সার।বাজারে নানা ব্রান্ডের ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগেই রয়েছে ক্ষতিকারক কেমিকেল এবং সুগন্ধী, যা ত্বককে করে রুক্ষ এবং খসখসে। আবার ভালো ক্লিন্সারের দামো অনেক বেশি, স্টুডেন্টদের পক্ষে যা কিনা সাধ্যের বাইরে। তাই আজ আমি কয়েকটা ফেসওাশের রেসিপি বলব যা ঘরে থাকা উপকরণেই বানানো সম্ভব। চলুন দেখে নেয়া যাক ঘরে বসে কীভাবে ফেসওয়াশ বানাবেন –
১. দুধ
হ্যাঁ , শুনতে আশ্চর্য লাগলেও দুধ কিন্ত খুব ভাল একটি ক্লিন্সার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ড্রাই স্কিনের জন্য এটা সবচেয়ে কার্যকরি একটি ফেসওাশ। দুধে রয়েছে নান রকম এনজাইম এবং ল্যাকটিক এসিড। যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে , নিষ্প্রাণতা দূর করে , সুন্দর একটা গ্লো দেয়। আর কমলার খোসায় থাকে ভিটামিন সি। এছাড়াও ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে। রানী ক্লিওপেট্রা তার সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে দুধ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।
যা যা লাগবেঃ তিন টেবিল চামচ ঠানডা দুধ , কটন প্যাড, কমলার খোসার গুঁড়া ( এটা না থাকলে স্কিপ করলেও চলবে)
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ ঠান্ডা দুধতা একটা বাটিতে নিন এবং কমলার খোসার গুঁড়াওমিশিয়ে নিন । এরপর তুলো দিয়ে আল্তো করে ত্বকে ঘষুন।
২. লেবু এবং মধু
লেবু এবং মধু প্রায় সবার বাসাতেই থাকে, তাই এই ক্লিন্সার বানাতে কোনো ঝক্কি পোহাতে হবে না। তৈলাক্ত এবং মিশ্র ত্বকের জন্য এটা খুবই উপযোগী। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড ভাল ক্লিন্সার আর মধু ত্বককে ময়েশ্চার দিবে । লেবু এবং মধুর এই মিশ্রণ ব্রণ দূর করতে বেশ কার্যকরী।
ফেসওয়াশ বানাতে যা যা লাগবে: এক চা চামচ মধু। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ মধু এবং লেবুর মিশ্রণ বেশি ঘন মনে হলে কয়েক ফোঁটা পানি মিশাতে পারেন। এরপর মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসেজ করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৩. শসা এবং টমেটো এর ফেসওয়াশ
গরমকালে সবচেয়ে আরামদায়ক এবং ফলপ্রসূ এই ক্লিন্সারটি । শসা রদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে এসে এই মিশ্রণটি লাগালে বেশ আরামদায়ক ফল পাবেন। টমেটো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
যে উপকরণ লাগবেঃ অর্ধেকটা শসা এবং একটা ছোট টোম্যাটো। মিক্সারে ভালমত পেসট নিয়ে নিন এবং সম্ভব হলে ফ্রিজে রাখুন।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট, এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৪. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
অ্যাপল সাইডার ভিনেগারে আছে ম্যালিক এসিড , যা ত্বকতে হালকা এক্সফলিয়েট করে এবং পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, তৈলাক্ততা দূর করে। তবে শুষ্ক এবং সেনসিটিভ ত্বকে এই মিশ্রণ ব্যাবহার না করাই ভাল।
যা যা লাগবেঃ ১ টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার , ৩ টেবিল চামচ পানি ।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ ভিনেগারকে পানির সাথে মিশিয়ে কটন প্যাড দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন, তবে চোখের দিকে লাগাবেন না।
৫. গোলাপ জল
গোলাপ জল শুধু ত্বককে পরিষ্কার ই করে না , ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে , তৈলাক্ততা দূর করে , পি এইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করে।
উপকরণ: ৩ টেবিল চামচ গোলাপ জল । কটন প্যাড।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ কটন প্যাডকে গোলাপ জলে ভিজিয়ে নিন এবং সারা মুখে লাগান।
৬.বেসন এবং হলুদ দিয়ে ফেসওয়াশ
বেসন আমাদের প্রায় সবার ঘরেই থাকে, আগেরকার দিনে মেয়েরা মুখ পরিষ্কার রাখতে বেসন ব্যাবহার করত। বেসন আমাদের মুখের সকল ময়লা দূর করে, এমনকি কেনা ফেসওয়াশের চাইতেও অনেকাংশে কার্যকর। আর হলুদে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান , যা ব্রণ দূর করে। আর এই মিশ্রণটা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
যা লাগবেঃ ১/২ কাপ বেসন , ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া ।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ মিশ্রণটি একটি এয়ার টাইট কৌটায় রেখে দিন । মুখ ধোবার সময় প্রয়োজনমত হাতে নিয়ে একটু পানি মিশিয়ে মুখে ম্যাসেজ করুন ।
৭. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার গুনাগুণ বলে শেষ কয়া যায় না। রোদে পোড়া নির্জীব ত্বকে প্রাণ ফেরাতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। এটা ত্বককে ময়েশ্চার করে। অতিরিক্ত রুক্ষ করে ফেলে না। ব্রন দূর করে , ত্বকে গ্লো আনে। চাইলে সরাসরি গাছথেকে এনে কেটে জেল টা ব্যবহার করতে পারেন , বা নিচের রেসিপিটি ফলো করতে পারেন-
এই ফেসওয়াশ বানাতে যা যা লাগবে: অ্যালোভেরা ১ টা পাতা , মধু ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ অ্যালোভেরা এবং মধু নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন । এরপর একটা বোতলে নিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। মনে রাখবেন ১ মাসের বেশি কোনোভাবেই এটা সংরক্ষণ করা যাবে না।
৮. গ্রিন টি
গ্রিনটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট , যা আপনার ত্বককে পুনরজ্জীবিত করবে। একই সাথে ভাল ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করবে। এছারাও গ্রিন টি ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করবে।
যা লাগবেঃ এক স্যাচেট গ্রিন টি নিয়ে টা চুলায় জ্বাল করুন , এরপর ঠাণ্ডা হয়ে আসলে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ চাইলে আওনি আইস ট্রেতে নিয়ে বরক হিসেবে ত্বকে লাগাতে পারেন , অথবা তুলায় ভিজিয়ে ত্বকে লাগাবেন।
৯. মূলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় , ফলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই ফেসওয়াশটি খুবই উপকারি । এছাড়া বড় ব্রণের আকার শুকিয়ে ছোট করে ফেলে , ফলে আর দাগ বসে না।
যা লাগবেঃ মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল.
যেভাবে ব্যাবহার করবেনঃ মিশ্রণটি ১০ মিনিট মুখে রাখবেন এবং ধুয়ে নেবেন । এরপর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন।
মুলতানি মাটি সম্পর্কে পড়ুন এখানে.
উপরোক্ত ফেসওয়াশ এর রেসিপিগুলোর সবকটাই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরী, কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই তাই এগুলো কখনোই আপনার ত্বকের ক্ষতি করবে না। তবে খেয়াল রাখবেন ব্যবহারের আগে বা ফেসওয়াশ বানানোর আগে উপকরণগুলো ভালো করে জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করে নিবেন.
Zeba Afia Tasnim