আপনার ত্বকের ধরণ কি? গাল ও গলা অতিরিক্ত শুষ্ক আর টি-জোন অর্থাৎ কপাল, নাক ও থুতনি তৈলাক্ত ? তাহলে আপনি মিশ্র ত্বকের অধিকারী। এ ধরণের ত্বকের যত্ন টাও বেশ ভিন্ন । চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কি উপায়ে মিশ্র ত্বকের যত্ন নেয়া যায় ।
১) উপযুক্ত ফেসওয়াশ
মিশ্র ত্বকের জন্য এমন ফেসওয়াশ প্রয়োজন যা একইসাথে ত্বক কে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা দিবে এবং তেল শোষণ করবে। টি-ট্রি, স্যালিসাইলিক এসিড ইত্যাদি উপাদান আছে এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
যেমন- কজার এক্স স্যালিসাইলিক এসিড ডেইলি ক্লিঞ্জার, টি-ট্রি ফোম ফেসওয়াশ, ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার ফেসওয়াশ ইত্যাদি। ফেসওয়াশ ব্যবহার করার পর জোর জোরে ঘষে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছবেন না। যদি আপনার ব্রণ থেকে থাকে আর আপনি তোয়ালে দিয়ে পুরো মুখ মুছেন তাহলে কিন্তু পুরো মুখেই ব্রণের জীবাণু ছড়িয়ে যাবে।
পুরো মুখেই ব্রণ উঠতে শুরু করবে। তাই, আলাদা একটি তোয়ালে ব্যবহার করতে পারেন যেটা দিয়ে আলতো করে মুছবেন এবং মুখের এক জায়গায় মুছলে তোয়ালের সেই অংশ দিয়ে মুখের অন্য জায়গা মুছবেন না। আর চাইলে টিস্যু ও ব্যবহার করতে পারেন।
২) টোনার
যেকোন ত্বকের জন্যই টোনার খুব প্রয়োজনীয় ধাপ, যা আমরা অনেকেই এড়িয়ে যাই। ফেসওয়াশের পরেই মুখ একটু টান টান এবং শুষ্ক হয়ে যায় যার জন্য আমরা টোনার ব্যবহার করি। হাইড্রেটিং টোনার যেমন- বডি শপের সিউইড টোনার, সিম্পলের টোনার খুব ভাল কাজ করবে এক্ষেত্রে।
টোনার কটন প্যাড বা হাত দিয়ে মুখে আলতোভাবে দিবেন, ঘষাঘষি করবেন না, এবং দেয়ার পর মুখ ধুতে হবে না। চাইলে রোজ ওয়াটার, বাসায় নিজে কমলার খোসা জ্বাল দিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
৩)ময়েশ্চারাইজার
খুব ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন সবারই। খেয়াল রাখতে হবে যাতে তেল না থাকে ময়েশ্চারাইজারে। নিউট্রিজিনার ওয়াটার জেল, সিম্পলের হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার বেশ ভাল ময়েশ্চারাইজার এক্ষেত্রে। কোরিয়ান বেশ কিছু ভালো ময়েশ্চারাইজার আছে যা মিশ্র ত্বকের জন্য উপকারী।
এক্সিস ওয়াই সেরা-হার্ট মাই টাইপ ড্যুও ক্রিম অন্যতম। কারণ এতে একই সাথে ২টো ভাগ করে ক্রিম দেয়া একটা টি-জোন এর ওয়েল কন্ট্রোলের জন্য আরেকটা গাল আর গলার জন্য শুষ্ক ত্বকের ময়েশ্চারাইজার। গাল ও গলার অংশটিকে ইয়ু জোন অভিহিত করা হয়। কোরিয়ান প্রোডাক্ট দাম বেশি হলেও এর গুনগত মান খুব ভালো।
৪) সানব্লক ক্রিম
মুখকে তেলতেলে না করে এমন সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। এস পি এফ যত বেশি হবে সান্সক্রিম টা ততই বেশি সুরক্ষা দিবে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে। এস পি এফ ৫০ এর কাছাকাছি বা তার বেশি হলে খুব ভাল হয়। বাজারে বিভিন্ন এস পি এফ এর সান্সক্রিম আছে। এর মধ্যে মিশা সান্সক্রিম, নিউট্রিজিনার সানব্লক, লোটাস সান্সক্রিম যে টা স্যুট করে ব্যবহার করতে পারেন।
৫) এক্সফলিয়েটোর
এক্সফলিয়েটোর ত্বকের ডেড সেল রিমুভ করে ত্বকের ময়লা দূর করে। সপ্তাহে ১-২ বার ভাল এক্সফলিয়েটোর ব্যবহার করা উচিত। এ.এইচ.এ বি.এইচ.এ আছে এমন অনেক এক্সফলিয়েটোর আছে এগুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ব্রণ বা সিম্পলের স্ক্রাব, ফ্রেয়াসের পিলিং জেল ইত্যাদি ও বেশ ভাল অপশন।
৬) ফেসপ্যাক
মিশ্র ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুব ভাল কাজ করে। অ্যালোভেরা জেল বাজারে যেটা কিনতে পাওয়া যায় ওটাও ব্যবহার করতে পারেন আবার সরাসরি গাছের অ্যালোভেরা জেল টা ও মুখে লাগাতে পারেন।
ঘরোয়া কিছু ফেসপ্যাকের মধ্যে আছে মধু আর লেবুর রসের প্যাক, কলা আর লেবুর রসের প্যাক, ডিম আর কলার প্যাক, শসার রস আর মধুর প্যাক, ওটস আর দইয়ের প্যাক, গোলাপ জল আর দইয়ের প্যাক, মুলতানি মাটি ও গোলাপ জলের প্যাক ইত্যাদি। এছাড়া কেনা ফেসপ্যাকের মধ্যে আছে- বডি শপের ক্লে মাস্ক, খাদির রোজ ওয়াটার ও স্যান্ডাল ফেসপ্যাক, গুড ভাইবসের পাপ্যায়া ফেসপ্যাক, ফ্রিম্যান চারকোল ফেসপ্যাক যেটি ফেসমাস্কের মত ব্যবহার করতে পারেন।
৭) সিরাম
সিরামের কাজ হল আপনার ত্বকের কোন বিশেষ চাহিদা বা বিশেষ সমস্যা থাকলে তার সমাধান করা। আপনার যদি ব্রণ, ব্রণের দাগ, হোয়াইট হেড,ব্ল্যাক হেডের সমস্যা থাকে সেগুলো দূর করতে সাহায্য করবে। হাইয়ালুরোনিক এসিড সংবলিত সিরাম মিশ্র ত্বকের জন্য উপকারি। নিউট্রিজিনা র্যাপিড রিঙ্কেল সিরাম হাইয়ালুরোনিক এসিড বিশিষ্ট এবং এটি ত্বকের বলিরেখা ভাঁজ দূর করতে সাহায্য করে। নাইসিনামাইড জাতীয় সিরাম ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
মুখে মেকাপ থাকলে অবশ্যই ভাল মেকাপ রিমুভার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে তারপর ফেসওয়াশ থেকে ত্বকের যত্নের ধাপ গুলো শুরু করতে হবে। মেকাপ রিমুভার হিসেবে তেল জাতীয় রিমুভারের পরিবর্তে ভাল মাইসেলার ওয়াটার যেমন – বায়োডারমার মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ও ফেসিয়াল ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন মেকাপ তুলতে।
মাঝে মাঝে ফেসপ্যাক, শিট মাস্ক, নোজ স্ট্রিপ, লিপ্স মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন যদি প্রয়োজন বোধ করেন। এগুলো অত্যাবশ্যকীয় নয় তবে উপরের ১ম ৫টি ধাপ মিশ্র ত্বকের জন্য আবশ্যকীয়। শুধু উপর থেকেই যত্ন নিলে হবে না ত্বকের , শরীর কে ভেতর থেকেও ভালো রাখতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে হবে, রাত জাগা যাবে না, প্রচুর ফলমূল শাকসবজি খেতে হবে, বাইরের খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি কম খেতে হবে এবং সর্বোপরি নির্ভার থাকতে হবে। রাত জাগা ব্রণ হবার অন্যতম কারন।মিশ্র ত্বকের সঠিক ভাবে যত্ন নিলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করা যাবে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।