ধূমপান ত্যাগ করার উপায় কি বা কিভাবে ধূমপান ত্যাগ করা যায়? অথবা ধূমপান ত্যাগের টিপস খুঁজছেন? অথবা আপনার স্বামী, বয়ফ্রেন্ড বা কাছের কেউ ধূমপায়ী? তাদের ধূমপান করা থেকে বিরত রাখার টিপস খুঁজছেন? মাদকের এই জামানায় ধূমপান ত্যাগের টিপস খোঁজার জন্য আপনাকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ধূমপান ত্যাগের টিপস শেয়ার করার আগে আমার মনে হয় এই সাইলেন্ট কিলার সম্পর্কে কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য আপনাদের জানা জরুরি।
ধূমপান সম্পর্কিত ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য
বিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশের বড় একটা অংশ ২০-২৫ বছর বয়সে ধূমপায়ী হয়ে উঠে। এবং ২১.৯ মিলিয়ন মানুষ ধূমপান করে। যেখানে ২১.২ মিলিয়ন পুরুষ এবং ০.৭ মিলিয়ন মেয়ে/মহিলা। বর্তমান সময়ে এর পরিমান আশংকাজনক হারে বেড়েই চলছে। তথ্য সুত্রঃ WHO
হু(WHO) এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৬৯ বয়সীদের মধ্যে যারা মারা যায় তাদের একটা বড় অংশ প্রায় ২০% ধূমপানজনিত কারনে মারা যায়।
তবে স্ট্যাটিস্টা এর তথ্য আরও ভয়ানক, ২০১৬সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে/পুরুষদের প্রায় ৪৪.৭ শতাংশ ধূমপায়ী। যা ২০১০ সালে ছিল ৪৮.৪ শতাংশ।
ধূমপান দেহের কি কি ক্ষতি করে?
আপনি জানেন কি ধূমপান আপনার মানুষিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করার পাশাপাশি আপনার শরীরে মরনব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সিগারেট পানের ফলে যক্ষ্মা, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, ডায়াবেটিকস, COPD, চোখের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, লিভারে সমস্যা, ফুসফুসে সমস্যা, রক্ত নষ্ট হয়ে যাওয়া সহ হাজারো রোগ হয়ে থাকে।
কেবল যে ধূমপায়ীদের এই সকল রোগ হয় তাই নয় কিন্তু। চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। এইসকল রোগ ধূমপায়ীদের পাশে যারা থাকে বা বাতাসে মিশে অন্যের শরীরে প্রবেশ করে তাদেরও হয়ে থাকে। তাই ধূমপায়ীরা আপনার জীবনের জন্যও হুমকির অন্যতম কারন।
বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের জন্য ধূমপানকারীরা একপ্রকার প্রান নাশকারী। আপনার ধূমপানের বলি হতে পারে আপনার ফুটফুটে ছোট্ট সন্তানটি অথবা আপনার বাসায় থাকা আপনার প্রিয় মা,বোন কিংবা অর্ধাঙ্গিনী।
ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান
আপনার প্রতিটি কাজের জন্য মৃত্যুর পর মহান রাব্বুল-আল-আমিন মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আপনি এই ইহ জগতে কি কি করছেন ভালো কিংবা খারাপ কাজ সব কাজের হিসাব দিতে হবে।
পবিত্র কুরানের সুরা আল-বাকারা (আয়াতঃ ১৯৫) বলা হয়েছে, “(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।”
মহাগ্রন্থ কুরআনের আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগন! যে সমস্ত পাক-পবিত্র (উৎকৃষ্ট) জিনিস আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি সেগুলো খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” আয়াত নাম্বার ১৭২, সুরা বাকারা।
অনেকেই বলে থাকেন কই আমি তো মারা যাই নাই। হ্যাঁ জনাব, প্রথম পুরুস্কারটা না পেলেও পরের গুলো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানা রোগব্যাধিতে ভরে যাবে।
মহা নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) বলেন, “কেউ অপরের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করে।” ( আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৬৩৫)। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় ধূমপান করা শাস্তযোগ্য অপরাধ।
আর এজন্য মৃত্যুর পর আল্লাহর আদেশ না মানার কারনে কঠিন শাস্তিতো আপনার জন্য অপেক্ষা করছেই। ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান কিংবা মাদক গ্রহন সম্পূর্ণ হারাম।
আপনি মাখরুহ বলে চালিয়ে দিতে পারেন। বলতে পারেন সিগারেট বা ধূমপান মাখরুহ। এতে কোন পাপ নেই। একবার ভাবুন এতো কিছুর পরও আপনি ধূমপান করবেন?
কিভাবে ধূমপান ত্যাগ করা যায়
আপনি কি ধূমপায়ী? এতো কিছুর পরও কি ধূমপান করবেন? একবার ভেছেন কি আপনার ধূমপান বা সিগারেট, মাদক আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কি কি ক্ষতি করছে।
সিগারেট ত্যাগে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলোঃ
১. কারন খুঁজে বের করুন
আপনি আসলে কি কারনে সিগারেট পান করছেন? কোন উত্তর আছে আপনার কাছে? নাহ ভাই আমার টেনশন দূর করার জন্য সিগারেট পান করি, গার্ল-ফ্রেন্ড চলে গেছে তাই সিগারেট পান করি, সংসারে শান্তি নাই তাই, বন্ধু বান্ধবের সাথে মজা করে টানি, এই সেই সাত-সতেরো এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবেন কি?
এবার আমাকে কিছু উত্তর দিন, সিগারেট কি আপনাকে এগুলো এনে দিতে পারবে? পারবে না। আপনার অর্থআর শরীর নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। এই সিগারেট বা মাদক।
২. নিজে নিজে চ্যালঞ্জ নিন
নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করুন আপনি সিগারেট ত্যাগ করবেন। ভালো কাজে অনেক বাধা আসে। টার্গেট নিন আগামি এক সপ্তাহ সিগারেট পান করবো না। প্রতিদিনের সিগারেটের টাকা জমিয়ে কিছু একটা ভালো কাজে লাগানোর কথা ভাবুন। হতে পারে আপনার নিজের জন্য একটা গিফট।
যখনই সিগারেট পান করতে মন চাইবে এটাকে সিম্পলভাবে নিন। সিগারেট না খেলে তো আমি মারা যাচ্ছি না। কি লাভ হয় সিগারেটে, শুধুই টাকা নষ্ট।
৩. সিগারেট পান করে এদের থেকে একটু দূরে থাকুন
কোথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। আপনি সিগারেট বা ধুমপান ত্যাগ করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ধূমপান করে এমন ব্যাক্তি হতে দূরে সরে আসতে হবে।
৪. অধূমপায়ীদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন
অধূমপায়ীদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন অর্থাৎ যারা সিগারেট বা মাদক গ্রহন করে না তাদের সাথে মিশুন, সময় দিন। ঘুরতে যান। সব থেকে ভালো হয় আপনার এমন কারো সাথে মেশার চেষ্টা করুন যার সামনে সিগারেট পান করতে আপনার লজ্জা লাগে। বা যে সিগারেট পছন্দ করে না।
৫. চুইংগাম কিংবা চকলেট মুখে রাখুন
আপনি দীর্ঘদিন ধূমপান করলে হঠাৎ সিগারেট পান করা ছাড়তে আপনার কষ্ট হতে পারে। যে সময় আপনার সিগারেট পান করতে মন চাইবে। তখন মুখে চকলেট কিংবা চুইংগাম দিতে পারেন। এর ফলে আপনার ব্রেইন অন্যদিকে ডাইভার্ট হবে।
৬. কাজের মধ্যে থাকুন
সিগারেট বা ধূমপান করতে মন চাইছে। কোন একটা কাজে লেগে যান। ঘরের কাজে আম্মু কিংবা স্ত্রীকে সাহাজ্য করুন। আপনি আপনার নিজের রুম ঘুছাতে পারেন। কিংবা থাকার ঘরটি পরিষ্কার করতে পারেন।
৭. মৃত্যুর কথা ভাবুন
এই জীবন সল্প সময়ের জন্য। আপনার পূর্ব পুরুষদের কথা ভাবুন, যারা এই দুনিয়া ছেড়ে ইতিমধ্যে চলে গেছে। আপনাকেও যেতে হবে। আপনার প্রতিটা কাজের জন্য জবাব দিতে হবে। সিগারেট বা ধূমপানের মাধ্যমে আপনি অর্থের অপচয় করছেন।
নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি অকৃতজ্ঞা। (বানী-ইসরাইল -২৭)
সুরা আরাফ আয়াতঃ ৩১ বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করে না।”
৮. অজু করে নামাজে দাড়িয়ে যান
যে সময়ে সিগারেট পান করতে মন চায় সোজা ওযু করে সিজদায় দাড়িয়ে যান। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি সব কিছুর সেরা ফয়সালা দাতা।
আপনি কি এখনও ধূমপান করবেন?
সম্মানিত ভিজিটর দুনিয়ার সময় খুব সীমিত। সুন্দর এই দুনিয়া ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হবে। আর সকল কিছুর হিসাব দিতে হবে মহান রবের কাছে। একবারও কি ভাবছেন আপনার কষ্টে আয় করা অর্থ ধোঁয়া জ্বালিয়ে শেষ করছেন।
আপনার ও আপনার কাছের মানুষের জন্য টাকা দিয়ে মরনব্যাধি ক্যান্সারকে দাওয়াত দিয়ে আনছে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করছেন।
একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য ধূমপান ত্যাগের কোন বিকল্প নেই। সময় ফুরিয়ে গেলে আর উপায় মিলবে না। আজই আপনার এই খারাপ অভ্যাসটি বদলে ফেলুন। নিজেকে সময় দিন। আর ভাবুন একবার ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ হয়ে গেলে আপনি তো মারা যাবেনই আপনার পরিবারের মানুষগুলোকেও মেরে যাবেন।