দ্রুত ওজন কমাতে দারুচিনি
বর্তমান বিশ্বে সবকিছু যেমন চোখের নিমিষে হয়ে যাচ্ছে, আমরা ভাবি ইশ! ওজন টাও যদি এভাবে ৫ মিনিটে কমিয়ে ফেলা যেত!
না, ওজন কমানো এত সহজ ব্যাপার না। নানাবিধ ডায়েট, একগাদা ওয়ার্কআউট, ইয়োগা, মর্নিং ওয়াক, হাজার হাজার টাকা খরচ করেও যেখানে কাজ হয় না সেখানে আমার এই লেখার টাইটেল দেখে কেউ অবাক হবেন না। কিন্তু আমি যে ভুল কিছু লিখছি, তা কিন্তু নয়।
এত অবাক করা একটা উপাদান নিয়ে আজকে সবাইকে জানাতে চাই যেটি নিম্নবিত্ত থেকে অতি উচ্চবিত্ত সবার রান্নাঘরে থাকেই। সেটি হলো দারুচিনি। আগে কি জানতেন যে দারুচিনি খেয়েও আপনি ওজন কমাতে পারবেন এবং এক দুই বছর লাগবে না। এক মাস অপেক্ষা করলেই দেখতে পাবেন এটার কার্যকারিতা।
দারুচিনি
দারুচিনি, যার ইংরেজি নাম হলো Cinnamon। এটি আসলে একটি মসলা জাতীয় গাছের বাকল যা বহুযুগ ধরে বাঙালি, ইন্ডিয়ান, আমেরিকান, ইটালিয়ান সব ধরনের কুইজিনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্বাভাবিক পরিবেশে এই বৃক্ষের উচ্চতা দশ থেকে বারো মিটার হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম এটি পাওয়া গিয়েছিল শ্রীলংকায়। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, চীন প্রভৃতি দেশেও উৎপাদিত হচ্ছে।
সাধারণত দুই ধরনের দারুচিনি বেশি দেখতে পাওয়া যায় বাজারে। প্রথমত যেটি খুব বেশি সহজলভ্য সেটি হলো বাকলের প্রথম এবং দ্বিতীয় লেয়ার থেকে তৈরি হয়। এটি দেখতে খুব একটা আকর্ষনীয় না হলেও এর গুণগত মান রোল্ড গুলির থেকে বেশি এবং বাসা বাড়িতে রান্নার ক্ষেত্রে এটিই ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়টিকে দেশে সাধারণত খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। এটি বাকলের তৃতীয় ও চতুর্থ লেয়ার থেকে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত ফুড ফটোগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়।
আরেকটা বহুগুণে ভরপুর উপাদান হলো মধু। সেই বহুযুগ ধরে নানী দাদিদের সময়কাল থেকে, এমনকি তারও আগে থেকে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক রোগ দূর করতে। মধু আর কালোজিরার কথা শোনেনি এমন কোনো বাঙালি মনে হয় নেই। মধু হলো প্রাকৃতিক চিনি। সাদা চিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর তার কোন ইয়ত্তা নেই। কিন্তু চিনির পরিবর্তে মধু একটা নিরাপদ অপশন বলা যায়। এন্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এই উপাদান টি আপনার প্রতিদিনের চায়ের সাথেও যোগ করতে পারেন। কারণ এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, মুখের রুচি বাড়ায় এবং খাদ্য হজমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিভাবে দারুচিনি খেলে ওজন কমবে
এখন আসি কিভাবে খাবেন। অনেক রিসার্চ করার পর এবং নিজে ট্রাই করার পরেই দারুচিনির এই ওয়েট লস রেসিপি দুটি আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি। সব থেকে সহজ রেসিপি দিয়ে শুরু করছি। তার জন্য যা যা লাগবে।
প্রথম রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ ২/৩ ডাল মিডিয়াম সাইজের দারুচিনি, এক চা চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস (অপশনাল)।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে একটি পাত্রে এক গ্লাস (২৫০মিলি) পানি নিয়ে তার মধ্যে দারুচিনি দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট জোরে জ্বাল দিন। তারপরের ১০ মিনিট হালকা আঁচে দিয়ে রেখে দিন। ১০ মিনিট পরে চুলা থেকে নামিয়ে এর মধ্যে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
দ্বিতীয় রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ২ টি মিডিয়াম সাইজের দারুচিনি, হাফ ইঞ্চি আদা কুচি, এক চা চামচ মধু।
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি পাত্রে এক গ্লাস (২৫০ মিলি) পানি নিয়ে এর মধ্যে আদা ও দারুচিনি দিয়ে ছয় থেকে সাত মিনিট জ্বাল দিন। তারপর চুলা বন্ধ করে ঢেকে দশ মিনিট রাখুন। মিশ্রণ টি গ্লাসে ঢেলে তার সাথে মধু মেশান। ব্যাস! হয়ে গেল ফ্যাট কাটার সিনামন ড্রিংক রেডি।
বেস্ট রেজাল্টের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একবার এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে পারেন। কিন্তু উপরোক্ত উপাদানের কোনোটিতে যদি অ্যালার্জি বা অন্য কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে খাবেন না।
দারুচিনির অন্যান্য উপকারিতা
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার কমিয়ে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায় যা কিনা সুগার লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- দারুচিনি তে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে অন্যান্য মসলা জাতীয় খাবারের তুলনায়। এই কারণে ফ্রি রেডিকেলের জন্য ত্বকের যেসব ড্যামেজ হয় তা কমিয়ে এনে এন্টি এইজিং এ সাহায্য করে।
- যেহেতু দারুচিনি এন্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি যৌগে পরিপূর্ণ, এটি ব্রেইনের মানসিক সমস্যা যেমন পার্কিনসন্স ডিজিজ, অ্যালঝেইমারস ডিজিজ ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
- দারুচিনির এক্সট্র্যাক্ট আমাদের দাতকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে যা মুখের গন্ধ, ক্যাভিটি, এমনকি দাতের ক্ষয় এর ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।
- এটি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি বিভিন্ন ধরনের ইনফেশনজনিত রোগ সারাতে কার্যকর।
- দারুচিনির গুঁড়া ব্রণের দাগ সারাতে কার্যকর। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- দারুচিনি দেহের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে এনে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সবশেষে কিছু কথা
অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই বিব্রত বোধ করে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে একটা অতিরিক্ত মেদ, স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া, জাঙ্ক ফুডে আগ্রহ বেশি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশি গ্রহন করা কিংবা বংশগতভাবে ইত্যাদি নানা রকম কারণে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। সুস্বাস্থ্য সকলের কাম্য। এই সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পরিপূর্ণ ও পুষ্টিকর ডায়েট আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ডায়েট ডাক্তাররা সাজেস্ট করে থাকেন, তারমধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হলো কিটো ডায়েট। কিন্তু কিটো ডায়েটের ও অনেক রকম সাইড ইফেক্ট লক্ষ্য করা গেছে। তাই যেকোন ডায়েট অথবা সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরমর্শ নেওয়া উচিত।
লিখেছেন- তাসনিম তামান্না প্রোমা