https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/02/how-to-remove-dandruff.jpg

চুল সৌন্দর্যের প্রতীক। সুন্দর ঝলমলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল সবাই চায়। তবে নিষ্প্রাণ,রুক্ষ চুল সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চুলের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটি হল খুশকি। যা চুলের অবস্থা ভয়াবহ করে তুলে। এই খুশকির কারনে আমাদের বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই চুলের খুশকি দূর করতে জেনে নিন কিছু ঘরোয়া টিপস, কোন তেল ব্যবহার করবেন, ও কোন ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।

খুশকি কি

খুশকি বা ইংরেজিতে Dandruff হল ত্বকের মরা কোষ। মাথার ত্বকের বিভিন্ন কোষ এর সাথে খুশকি জন্মায়। দুনিয়ায় এমন মানুষ নেই যার মাথায় খুশকি হয় নি। খুশকি মানুষের ত্বকের একটি রোগ। যে কোন বয়সী মানুষের মাথার চুলে এটির দেখা মিলতে পারে। এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। 

খুশকির ধরন

অবাক হয়ে গেলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে খুশকি ২-৩ ধরনের হয়ে থাকে। শুষ্ক ত্বকের খুশকি, তৈলাক্ত ত্বকের ড্যানড্রাফ এবং ফাঙ্গাস জনিত ড্যানড্রাফ। তাছাড়া এরা আকার ছোট বড়ও হয়ে থাকে। সাধারণত ছোটো খুশকির চেয়ে বড় খুশকি বেশি চোখে আসে।

মাথায় খুশকি কেন হয়

সঠিক পদ্ধতিতে মাথা ও চুল পরিষ্কার না করলে ও সঠিক তেল কিংবা শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে এই সমস্যা দেখা দেয় হয়। মূলত চুল অপরিষ্কার থাকলে খুশকি হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। চুলে খুশকি হওয়ার অন্যম কয়েকটি কারন নিচে দেওয়া হলঃ 

  1. মাথার ত্বক  অতিরিক্ত তেল চিটচিটে হয়ে থাকলে।
  2. মাথায় ধুলো ময়লা জমে।
  3. মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক থাকলে ।
  4. ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফাংগাল ইনফেকশন অথবা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে খুশকি হয়।
  5. ভেজা চুল অনেকক্ষন বেধে রাখলে Dandruff হয়।
  6. মানসিক দুশ্চিন্তার কারনেও ড্যানড্রাফ হয়ে থাকে।

খুশকি দূর করার কার্যকরী টিপস বা সমাধান 

একটু সচেতন ও কিছু ঘরোয়ায় পদ্ধতি অনুসরন করলেই আপনি খুশকি বিরক্তকর জিনিসটি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিচে খুশকি দূর করার কিছু কার্যকরী পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

১) নিয়মিত চুল পরিষ্কার

চুল সবসময় পরিষ্কার রাখুন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন চুলে শ্যাম্পু করুন।যারা প্রতিদিন বাইরে যান তারা প্রতিদিন চুল শ্যাম্পু করুন।আপনার ব্যবহৃত চিরুনি এবং তোয়ালে শুধুমাত্র আপনি নিজে ব্যবহার করুন এবং অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

২) পর্যাপ্ত তেল ব্যবহার

সপ্তাহে ৩-৪দিন পরিষ্কার চুলে তেল দিন। নারকেল তেল গরম করে প্রথমে মাথার ত্বকে তুলো দিয়ে চেপে চেপে লাগান।তারপর হাতের তালুর সাহায্যে মেসেজ করুন ৫-১০ মিনিট।  তারপর পুরো চুলে লাগিয়ে ফেলুন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।

৩) লেবুর রস ও নারিকেল তেল

সপ্তাহে ৩-৪ দিন ২ টেবিল স্পুন লেবুর রস এর সাথে পরিমান মত নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বক এ মেসেজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পাবেন।

৪) মেথি ব্যবহার করুন

মেথি রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন বেটে সাথে পরিমান মত লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মেথি চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। চুলের খুশকি দূর করতে মেথির গুনাগুন অনেক। মেথি চুলের পুষ্টি যোগায় এবং ছত্রাক সংক্রমণ রোধ করে। মেথি ব্যবহারে চুল সুন্দর, ঝলমলে ও ড্যানড্রাফ মুক্ত করে।

৫) চায়ের লিকার

চা এর লিকার এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বক এ মেসেজ করে ৩০মিনিট  রাখুন। ভালভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চা এর লিকার খুশকি দূর করতে সক্ষম এবং খুব দ্রুত কাজ করে।

৬) টক দই

টকদই চুলের পুষ্টি গুন বাড়ায়। চুল কে ঝলমলে এবং গোড়া থেকে মজবুত করে তোলে। এককাপ টকদই ও ৩ চামচ পানি মিশিয়ে মাথার ত্বক এ লাগান। ৩০-৪৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে খুশকি দূর হবে এবং চুল হবে প্রানবন্ত।

৭) আরও কিছু টিপস

নিম পাতার রস ড্যানড্রাফ দূর করার ক্ষেত্রে খুব উপকারি। নিম পাতার রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২০মিনিট পর ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে আ্যলোভেরা জেল এর জুড়ি নেই। এর রস চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন ড্যানড্রাফ মুক্ত চুল পাওয়ার জন্য। চুলকানি ও খানিকটা দূর হবে। পাশাপাশি খুশকি থাকাকালীন চুলে মেহেদী  না দেওয়াই ভালো। মেহেদী চুলের গোড়ায় অবস্থান করে। যার ফলে খুশকি বেড়ে যায়। তাই মেহেদীর রস ব্যবহার করা ভাল।

অবশ্যই Dandruff রোধ করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। নিচে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। তবে বাসায় চুলের যত্ন না নিতে পারলে  সপ্তাহে বা মাসে একদিন পার্লার কিংবা স্যালন এ গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট বা হেয়ার স্পা করতে পারেন।

খুশকি মুক্ত চুল পেতে ৩টি উপকারী ঘরোয়া হেয়ার প্যাক

ড্যানড্রাফ মুক্ত চুল পেতে নিচের দেওয়া ঘরোয়া হেয়ার প্যাকগুলো বেশ কার্যকরী। আপনার চুলকে ড্যানড্রাফ মুক্ত করতে নিচের দেওয়া এই তিনটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি উপকরন প্রয়োজন ও কিভাবে প্যাকগুলো তৈরি ও ব্যবাহার করবেন। 

১ম হেয়ার প্যাকঃ

  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস।
  • এক টেবিল চামচ জলপাইয়ের তেল।
  • ১ টেবিল চামচ নিম পাতার রস। 

সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা রাখি।

২য় হেয়ার প্যাকঃ

  • ২ টেবিল চামচ টক দই।
  • ১ টেবিল চামচ মেথি বাটা / গুড়ো। 
  • ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল।

সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মাথার ত্বক এ লাগান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। 

৩য় হেয়ার প্যাকঃ

  • 3 টেবিল চামচ পানি।
  • ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। 

মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মাথার ত্বক এ লাগান। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।  খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী এবং কার্যকর। 

খুশকি দূর করতে যেসব তেল ব্যবহার করবেন 

মাথায় তেল দেওয়া খুব সাধারণ কিছু। তেল চুলকে করে মজবুত, সতেজ এবং প্রাণবন্ত। বিভিন্ন তেলের ব্যবহার খুশকি দূর করা সম্ভব। খুশকি দূর করতে বিভিন্ন তেলের গুনাগুন অনেক।

  • নারিকেল তেলঃ ড্যানড্রাফ সাধারণত শুষ্ক ত্বক এর কারনে হয়। নারিকেল তেল ত্বকের শুষ্কতা রুক্ষতা দূর করে। ত্বক মসৃণ ও সতেজ করে তোলে এবং খুশকি তৈরি করার ছত্রাককে মেরে ফেলে। যার ফলে খুশকি জন্মাতে পারে না। 
  • জলপাই তেলঃ জলপাই তেল ত্বকের স্বাভাবিক PH level বজায় রাখে এবং পাশাপাশি ত্বকের মৃত কোষ এবং Dandruff এর স্তর পরিষ্কার করে। 
  • কাঠবাদামের তেলঃ কাঠ বাদামের তেল মাথার ত্বকের ত্বক পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি ত্বকের Dandruff দূর করে। মাথার ত্বককে এক্সফলিয়েট করে। যার ফলে চুলের গোড়ায় গোড়ায় ময়লা জমতে পারে না ফলে ত্বকের কোষ মারা যাওয়ার মাত্রা কমে যায়। 
  • মেথির তেলঃ মেথির পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তেল মাথার ত্বকের ড্যানড্রাফ দূর করতে সক্ষম। মেথির তেল চুলের রুক্ষতা শুষ্কতা দূর করে এবং চুলের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। 
  • আমলকীর তেলঃ আমলকীর তেল খুশকির স্তর ধ্বংস করে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় তা ড্যানড্রাফ দূর করতে বেশ উপযোগী।এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ফর্মুলা এর কারনে চুলে Dandruff জনিত যে কোন ছত্রাক টিকে থাকতে পারে না। 

খুশকি মুক্ত চুল পেতে কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন? 

 চুলের খুশকির সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই খুশকি রোধক শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। বাজারে বিভিন্ন শ্যাম্পুর মধ্যে থেকে বাছাইকৃত কিছু খুশকি রোধক শ্যাম্পুর নাম জেনে নিন। 

  • ক্লিয়ার অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। 
  • হেডেন সোল্ডার অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। 
  • ডাভ এন্টি ড্যানড্রাফ সুদিং শ্যাম্পু। 
  • ট্রেসেমি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
  • প্যান্টিন প্রো ভিটামিন b3 এন্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু।
  • লরিয়াল প্যারিস সিক্স অয়েল নারিশ অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। 
  • পতঞ্জলি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
  • দ্যা বডি শপ শিয়া বাটার শ্যাম্পু। 

জেনে নিলেন তোহ,  খুশকি দূর করার টিপস ও সমাধান। মনে রাখবেন Dandruff কে অবহেলা করলে কিংবা সমস্যা এড়িয়ে গেলে তা পরবর্তীতে বড় আকার ধারন করবে। যার কারনে চুল পরা হতে শুরু করে  বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে।  তবে খুশকির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

জেনে নিলেন তোহ, খুশকি দূর করার ঘরয়া টিপস ও সমাধান।  তবে খুশকির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

প্রিয় ভিজিটর, আপনার লেখা টিপস ট্রিকস শেয়ার করতে পারেন আমাদের সাথে। আমাদের কাছে লিখতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন কিংবা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.