https://tipswali.com/wp-content/uploads/2020/08/খাবার-তালিকা.jpg

বয়সভেদে খাবার তালিকা: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল এই প্রবাদটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। এআইএস এর তথ্য মতে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৭৫ শতাংশ মহিলা আয়রন সল্পতায় ভুগছেন। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে- বাংলাদেশে প্রায় ৮৮ শতাংশ পরিবারে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি বিদ্যমান এবং ৯০ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের ভিটামিন- সি এর ঘাটতি বিদ্যমান। এভাবে সকল প্রকার ভিটামিন এর ঘাটতি রয়েছে।

আপনি আরও জানেন কি?

আপনি জেনে আরও অবাক হবেন যে, বাংলাদেশে প্রায় ৩১ শতাংশ শিশু খর্বকায় এবং ১৪ শতাংশ শিশু কৃশকায়। দেশে ডায়াবেটিকস রোগীর পরিমান প্রায় ৭.৯ শতাংশ আর স্থূলকায় ভুগছেন প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ। ৫ বছরের নিচের প্রায় ৪৪ শতাংশ শিশু এবং মহিলাদের ৫৭.৩ শতাংশ জিঙ্ক সল্পতায় ভুগছেন। তবে এর অন্যতম কারন হচ্ছে  কোন ধরনের পুষ্টি উপাদান কি পরিমান গ্রহন করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের সঠিক ধারনা নেই।

তবে সুসংবাদ হচ্ছে যে, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ও নানা রকম শাকসবজি রয়েছে যাতে কিনা প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সঠিক খাদ্য তালিকা আমাদের কোন বেলায় কি পরিমান পুষ্টি উপাদান গ্রহন করতে হবে তার নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের পুষ্টি চাহিদা নির্ভর করে সে কি পরিমান পরিশ্রম করে, তার দেহের ওজন এর উপর।

আজকের লেখায় চলুন জেনে নেওয়া যাক- পূর্ণ বয়স্ক, শিশু, কিশোর-কিশোরী; এবং গর্ভবতী মায়াদের খাবার তালিকা সম্পর্কে এবং কোন খাবার কি পরিমান থাকা ও খাওয়া উচিত।

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের খাবারে প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের খাবারের তালিকায় যা যা থাকা উচিত তা নিচে দেওয়া হলো:

  1. চাল ৩০০-৪০০ গ্রাম
  2. আটা  ১৫০ গ্রাম
  3. ডাল ৫০-৬০ গ্রাম
  4. মাছ/ডিম/মাংস ৭০-১০০ গ্রাম
  5. শাঁক ১০০ গ্রাম
  6. অন্যান্য সবজি ১০০ গ্রাম
  7. আলু ৮০-১০০ গ্রাম
  8. ফল ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম
  9. তেল ৩৫-৪০ গ্রাম
  10. চিনি/গুড়/মিষ্টি ৩০ গ্রাম।

খাদ্য তালিকায় দেওয়া খাদ্যগুলো অবশ্যই ফরমালিন মুক্ত খাবারের কথা বলা হয়েছে। বাজার থেকে তরকারি কিনে বাসায় নিয়ে আসার পর ভালো ভাবে ফরমালিন মুক্ত করুন। অথবা বাসায় কিংবা বাসার আশেপাশে/ছাদে যায়গা থাকলে শাকসবজি উৎপাদন করে ১০০ ভাগ ফরমালিন মুক্ত খাবার খাওয়া সম্ভব। এ কাজে আপনি আপনার নিকটস্থ সরকারি কৃষি কর্মকর্তার সাহায্য নিতে পারেন। ফসল বা শাঁক-সবজি পরিষ্কার করার কাজে অবশ্যই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করুন।তথ্য সুত্রঃ এএসআই। 

০ থেকে ২ বছরের শিশুদের খাবার তালিকা

শিশু জন্মের ৬ মাস পর্যন্তও মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। তবে শিশু যদি পর্যাপ্ত দুধ না পায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। গর্ভবতী মায়েদের ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের খাবার তালিকায়ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন; স্তন্যদাত্রী মাকে মাছ, কবুতরের মাংস, দুধ, ডিম, টক জাতীয় ফল, পানিজাতীয় খাবার ও নানা রকমের রঙিন শাকসবজি খেতে দিন।

৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্য অনুসারে অধিক পুষ্টিকর খাবার দিন; পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আর তা হচ্ছে শিশুর জন্য পরিস্কার ও পরিছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা। অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানুষিক বিকাশ ঘটে না এবং তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিক, অবসাদ ও ব্যাক্তিত্বহীনতা দেখা যায়।

গর্ভবতী মায়াদের খাদ্য তালিকা

আপনার-আমার দুনিয়ায় আসার পিছনে সৃষ্টিকরতার পড়ে যার সব চেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তিনি হচ্ছে আমাদের প্রিয় মা। মায়েদের অফুরন্ত ভালোবাসা আর স্নেহে শিশুরা নিরাপদের বেড়ে ওঠে; আর আপনার ঘরেও যদি প্রসুতি মা থাকে তার প্রতিও বিশেষ যত্ন নিন। গর্ভবতী/প্রসুতি মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকঃ

গর্ভবতী মায়ের সকালের খাবার:  সকাল আটটা হতে সাড়ে আটটা রুটি চারটি অথবা পরোটা দুটি; একটি ডিম ও দুই কাপ সবজি।

এগারোটা হতে সাড়ে এগারোটা: ২৫০ মিলি দুধ অথবা বাদাম ৬০ গ্রাম, সাথে দুইটি বিস্কুট অথবা মুড়ি, যেকোন একটি মৌসুমি ফল যতটুকু খেতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের দুপুরের খাবার: তিন কাপ পরিমান ভাত অথবা মাঝারি চায়ের কাপের তিন কাপ, মাছ/মাংস দুই টুকরা, শাঁক-সবজি, সালাদ, লেবু, পরিমান মতো ডাল। সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ।

প্রসুতি মায়ের বিকালের খাবার: গর্ভবতী মাকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা হতে সাড়ে ছয়টায় ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ কিংবা স্যুপ, ৩০ গ্রাম কিস্কুট অথবা মুড়ি, অথবা এক কাপ নুডুলস খেতে দিন।

রাতের খাবার: রাতের বেলায়ও খাবারে বিশেষ কিছু পরিবর্তন থাকবে; রাতের খাবারে ৪ কাপ ভাত, মাছ অথবা মাংস, শাঁক-সবজি, এবং এক কাপ ডাল থাকা উত্তম।

এসকল খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমান পানি ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য খাওয়ান; নিয়মিত হাটা চলা করতে সাহায্য করুন এবং শেষের দুই মাস সার্বক্ষণিক কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। গর্ভবতী নারীর টিপস

তথ্য সুত্রঃ প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিকস হাসপাতাল। (প্রথম আলো)

কিশোর কিশোরীদের খাবার তালিকা

আমাদের দেশের বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে অর্থাৎ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সে। এই সময়টাতে কিশোর কিশোরীদের খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়া উচিত; এ সময়ে তাদের দৈনিক খাবারে ২২০০ গ্রাম ক্যালরি থাকতে হবে।

খাবারে পর্যাপ্ত শর্করা, আমিষ, খনিজ লবন, ভিটামিন, ফ্যাটি এসিড, ও পানি থাকতে হবে; পাশাপাশি টক জাতীয় খাদ্য ও সামুদ্রিক মাছ। কিশোর কিশোরী/ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের খাবার তালিকায় যে সকল খাবার থাকা উচিত:

সকালের নাস্তা: ডিম, রুটি, সবজি সাথে একগ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাতীয় যে কোন খাবার খেতে দিন। সাথে পর্যাপ্ত পানি।

এগারোটা হতে সাড়ে এগারোটাঃ বিস্কুট অথবা মুড়ি এবং সম্ভব হলে যে কোন একটি ফল খেতে দিন।

দুপুরের খাবার: দুপুরে পর্যাপ্ত ভাত এবং ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন অথবা ৪ দিন মাছ এবং সপ্তাহে ২ দিন মুরগি খেতে দিন। পাশাপাশি নিয়মিত শাঁক-সবজি রাখুন; তবে গরু ও খাসির মাংস কম খাওয়া ভালো মাসে ২-৩ দিন খাওয়া যায়।

বিকালের খাবার: কিশোর কিশোরীদের বিকালে পর্যাপ্ত খেলাধুলা করতে দিন। বিকালের নাস্তায়  ফ্রায়েড চিকেন, গ্রিল চিকেন, পেয়াজু বা তেল জাতীয় খাবার না খাওয়া উত্তম। এ সময়ে তাদের নুডুলস, বিস্কুট, ছোলাভুনা খেতে দিন।

বয়ঃসন্ধিকালে রাতের খাবার: আমাদের দেশে রাতের খাবারে সচারার দুপুরের মতো খাবার খাওয়া হয়। রাতের খাবারে ভাতের পরিমান কম রাখুন। সাথে মুরগি, সালাদ, শাঁক-সবজি, ইত্যাদি রাখুন। ফার্মের মুরগি পরিহার করা উত্তম, পারলে দেশি মুরগি খাওয়া ভালো; ঘুমের আগে এক গ্লাস দুধ খেতে হবে। তবে চা কফি একদম পরিহার করা উচিত।

তথ্য সুত্রঃ  নওয়াজ ফারহিন।

সুষম খাবার নিশ্চিত করার পাশাপাশি আপনার সন্তান কাদের সাথে মেলামেশা করছে, কিংবা কাদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় পার করছে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। তাদের সময় দিন। গ্রামীণ পরিবেশে ঘুড়তে নিয়ে যান। দাদা-দাদি থাকলে তাদের সাথে সময় কাটাতে দিন। 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, অন্যের পাশাপাশি আপনার নিজের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়লা নিন। পর্যাপ্ত খাবার গ্রহন ও পানি পানের পাশাপাশি বাহিরে ঘুরতে যাওয়া, নিকট-আত্মীয়দের সাথে কথা বলা, নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

বাসায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে তা দের সময় দিন। পরিবারের সদস্যদের সাথে এক সাথে বসে গল্প করুন বা ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখুন। 

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন আপনার প্রিয়জনের সাথে। অথবা আপনার জানা কোন টিপস, টিপসওয়ালী ব্লগে শেয়ার করতে ইমেইল করুন আমাদের কাছে। আমাদের কাছে লিখতে ক্লিক করুন এখানে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.