শুধু বিদেশ ভ্রমন নয় বর্তমান সময়ে নানা কাজে পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের সকল আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পদ্ধতি একই। বর্তমানে বাসায় বসে অনলাইনে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের সাহায্যে পাসপোর্টের জন্য আবেদন ও ফি এর টাকা জমা দেওয়া যায়। পাসপোর্ট পেতে শুধুমাত্র স্বাক্ষর ও ফিঙ্গার প্রিন্ট বা হাতের আঙুলের ছাপ দিতে নির্দিষ্ট অফিসে যেতে হয়। এর পর পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলেই আপনার কাজ শেষ।
সম্মানিত ভিজিটর আমাদের অনেকেরই অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও ফি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নেই যে কিভাবে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে হয়, টাকা জমা দিতে হয় এবং কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন। আর এই সকল বিষয়ে না জানার কারনে মানুষ দালালের শরণাপন্ন হয় টাকা ও সময় নষ্ট করে।
প্রিয় ভিজিটর, আজকের লেখা জুড়ে আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো Passport in BD বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরি ও অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম, পেজ ও মেয়াদ ভেদে ফি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট সংগ্রহ ও হাতে পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত।
সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে ই-পাসপোর্টের জন্য আনলাইনে অথবা পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে ফরম পূরণ করে নির্ধারিত অফিসে জমাদান। মনে রাখবেন এই জন্য আপনাকে কোন প্রকার কাগজপত্র কিংবা ছবি সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে না। সকল তথ্য জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুসারে। উল্লেখ্য কারো বয়স ১৮ বছরের নিচে হইলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদন/ ১৮ থেকে ২০ বছর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদন কিংবা ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে ও এর বেশি হলে এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামুলক।
- ১ম ধাপ- সহজলভ্যতা যাচাই করুন
- ২য় ধাপ- পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ
- ৩য় ধাপ- পাসপোর্ট ফি পরিশোধ
- ৪র্থ ধাপ- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা ও বায়োমট্রিক এনরোলমেন্ট
- ৫ম ধাপ- আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন
- BD Passport From PDF
১ম ধাপ- সহজলভ্যতা যাচাই করুন
প্রথমে [https://www.epassport.gov.bd/] এই ঠিকানায় প্রবেশ করে, আপনার এরিয়ায় এটি এভেইলেভেল কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখনে আপনি কি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করছেন কিনা- ইয়েস বা নো তে ক্লিক করুন। দেশের মধ্য হতে হলে ইয়েস সিলেক্ট করুন। আর বিদেশ হলে নো সিলেক্ট করুন।
Dropdown মেনু হতে আপনার জেলা সিলেক্ট করুন এবং আপনার বর্তমান ঠিকানার নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করুন।
২য় ধাপ- পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ
এখানে ধাপে ধাপে অনলাইনে পাসপোর্ট ফরম পূরণ করার নিয়ম দেওয়া হল:
একাউন্ট তৈরি করুন
আপনার ইমেইল ঠিকানা লিখুন ও আপনি রোবট কিনা যাচাই করে কন্টিনিউতে ক্লিক করুন। এপর্যায়ে আপনাকে একটি একাউন্ট তৈরি করতে বলা হবে। পাসওয়ার্ড, ভোটার আইডি কার্ড কিংবা জন্মন সনদ অনুসারে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য (ফুল নাম, সার নাম হিসেবে আপনার নামের শেষের অংশ, মোবাইল নাম্বার) দিয়ে রোবট চেক করে Create account এ ক্লিক করুন। পাসওয়ার্ডটি মনে রাখুন ও বড় হাত ছোট হাত মিলিয়ে দিন।
আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হবে। ইমেইল চেক করে ওই লিংকটিতে ক্লিক করুন। এবং পুনরায় ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন। এবং ধাপে ধাপে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন।
ব্যাক্তিগত তথ্য
আপনার নিজের জন্য হলে I apply for myself সিলেক্ট করুন। এর পর লিঙ্গ পুরুষ/মহিলা/অন্যান্য (Male/female/other) সিলেক্ট করুন। একাউন্ট তৈরি করার সময় দেওয়া নাম ও সার নেম থেকে যাবে। এর পর ধাপে ধাপে আপনার প্রফেশন, ধর্ম, ফোন নাম্বার, কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন সেটি সিলেক্ট করুন, জেলা, জন্ম তারিখ ও জাতীয়তা (By birth/by descent/migration/naturalization/by marriage/other) সিলেক্ট করুন এবং Save and Continue তে ক্লিক করুন। প্রয়োজনে দুই/তিন বার চেক করুন।
ঠিকানা
এপর্যায়ে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকনা দিন। ড্রপডাউন মেনু হতে প্রথমেই জেলা সিলেক্ট করুন, এর পড়ে আপনার গ্রাম/শহর/বাসার ঠিকানা লিখুন, রাস্তা/ব্লক/সেক্টর(অপশনাল), পোস্ট অফিস, পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করুন। একই ভাবে বর্তমান ঠিকানা দিন। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকনা একই হলে টিক মার্ক দিন। এটি আপনাকে আপনার এরিয়ার Passport Office দেখাবে। এবার Save and Continue তে ক্লিক করুন।
আইডি ডকুমেন্টস
আপনার আগের পাসপোর্ট থাকলে সেটি এমআরপি হলে এমআরপি আর ইলেক্ট্রনিক Passport হলে সেটি সিলেক্ট করুন। আর কোনটি না থাকলে নো বা শেষেরটি সিলেক্ট করুন। এর পর আপনার অন্যদেশের পাসপোর্ট থাকলে ইয়েস বা না থাকলে নো সিলেক্ট করুন। এই ধাপে সবশেষে এনআইডি কার্ড নাম্বার দিয়ে Save and Continue তে ক্লিক করুন।
অভিবাভকের তথ্য
বাবা মায়ের তথ্য আপনার বাবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে তাদের সম্পূর্ণ নাম, পেশা ও জাতীয়তা দিন। চাইলে ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার দেওয়া যেতে পারে। এটি অপশনাল। মা-বাবার অবর্তমানে কোন লিগাল গার্ডিয়ান থাকলে দিতে পারেন আর না থাকলে Not Applicable সিলেক্ট করুন। সেভ ও কন্টিনিউতে ক্লিক করুন।
দাম্পত্য তথ্য
Dropdown Option হতে Single/married/divorced/widower/widow সিলেক্ট করুন। (যে কোন একটি)। সেভ ও কন্টিনিউতে ক্লিক করুন
জরুরী যোগাযোগ
বিশেষ বা জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায় এমন কারো তথ্য দিন। Dropdown box হতে আপনার মতো করে যে কোন একটি অপশন সিলেক্ট করুন। এর পর ধাপে ধাপে ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে নাম, জাতীয়তা, জেলা, গ্রাম/শহর/বাসা, পোস্ট অফিস, পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করুন।, ফোন নাম্বার দিয়ে সেভ ও কন্টিনিউতে ক্লিক করুন। আপনি এই নাম্বারে আবেদনের স্ট্যাটাস জানতে টিক মার্ক দিয়ে দিতে পারেন।
পাসপোর্ট অপশন
কোন ধরনের Passport নিতে চান সেটি সিলেক্ট করুন। ৪৮ অথবা ৬৪ পেজ এবং ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদ অপশন থেকে আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ মতো সিলেক্ট করুন।
- ৪৮ পেজ এবং ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট এর দাম যথাক্রমে ৳৪০২৫ এবং ৳৫৭৫০ (লেখা প্রকাশ কালীন)
- ৬৪ পেজ এবং ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের দাম যথাক্রমে ৳৬৩২৫ এবং ৳৮০৫০ (লেখা প্রকাশ কালীন)
ডেলিভারি অপশন ও এপয়েন্টমেন্ট
এখানে আপনি দুইটি অপশন পাবেন Regular এবং Express delivery আপনার সুবিধা ও প্রয়োজন মতো সিলেক্ট করুন। এবং নিচে থাকা ক্যালেন্ডার থেকে আপনার পছন্দ মতো তারিখ সিলেক্ট করুন। সবশেষে Save and continue তে ক্লিক করুন।
৩য় ধাপ- পাসপোর্ট ফি পরিশোধ
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠা, মেয়াদ ও ডেলিভারির সময় ভেদে পাসপোর্টের জন্য আলাদা আলাদা ফি ধার্য করা হয়েছে এবং এই ফি নির্ধারিত কিছু ব্যাংকে জমা দিতে পারবেন। বাংলাদেশের যেসব ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা নেওয়া হয় ঢাকা ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ওয়ান ব্যাংক। যারা বেশি বেশি বিদেশ ভ্রমন করতে চান বা করেন তাদের জন্য ৬৪ পেজ উত্তম।
পাসপোর্ট ফি এর তালিকা
নিচে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারির সময় ভেদে ফি এর তালিকা দেওয়া হলঃ
ধরন | পৃষ্ঠা সংখ্যা | মেয়াদ | ডেলিভারির সময় | ফি |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ৫ বছর | ১৫ কর্ম-দিবস | ৪০২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ৫ বছর | ৭ কর্ম-দিবস | ৬৩২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ৫ বছর | ২ কর্ম-দিবস | ৮৬২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ১০ বছর | ১৫ কর্ম-দিবস | ৫৭৫০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ১০ বছর | ৭ কর্ম-দিবস | ৮০৫০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৪৮ | ১০ বছর | ২ কর্ম-দিবস | ১০৩৫০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ৫ বছর | ১৫ কর্ম-দিবস | ৬৩২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ৫ বছর | ৭ কর্ম-দিবস | ৮৬২৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ৫ বছর | ২ কর্ম-দিবস | ১২০৭৫ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ১০ বছর | ১৫ কর্ম-দিবস | ৮০৫০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ১০ বছর | ৭ কর্ম-দিবস | ১০৩৫০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট | ৬৪ | ১০ বছর | ২ কর্ম-দিবস | ১৩৮০০ টাকা |
৪র্থ ধাপ- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা ও বায়োমট্রিক এনরোলমেন্ট
বলতে গেলে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগের সর্বশেষ ধাপ এটি। আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার সময় আপনাকে কিছু ডকুমেন্টস সাথে নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট করতে যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে-
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহ এপ্লিকেশন পত্রের সারাংশের প্রিন্ট কপি
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নং
- পূর্বের কোন Passport থাকলে সেটি এবং ডাটা পেজের কপি (যদি থাকে)
- সরকারি চাকুরিজীবী হলে যদি GO অথবা NOC সেটি জমা দিতে হবে
- কোন তথ্য সংশোধন করতে চাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আবেদন পত্রের কপি (অপশনাল)
মনে রাখবেম এনরোলমেন্ট এর সময় আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হবে। এটি সংরক্ষণ করুন।
৫ম ধাপ- আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন
পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন ও আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে নির্ধারিত তারিখে বা দুই এক দিন পরে আপনাকে এটি প্রদান করা হবে। নতুন পাসপোর্ট আনতে যাওয়ার সময় সাথে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যান।
BD Passport From PDF
প্রিয় ভিজিটর, Passport তৈরি করার নিয়ম এখানেই শেষ করছি। আমাদের লেখা নিয়ে আপনাদের কোন মতামত, প্রশ্ন, কিংবা অভিযোগ থাকলে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
বিমানে চড়ার নিয়ম পড়ুন এখানে।