Apang Tree: আপাং গাছ, নাম শুনেছেন কখনো? গ্রামের মানুষজন কিছুটা চিনলেও শহরের মানুষের কাছে এর পরিচিত খুবই কম। আবার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন- রক্ত আপাং, সিসা গন্ধা, চিরচিরে গাছ ইত্যাদি। সম্মানিত ভিজিটর, আজকের লেখা জুড়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আপাং গাছ কি, আপাং বা চিরচিরে গাছের উপকারিতা, ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
Table of Contents
আপাং কি?
মূলত আপাং হচ্ছে একটি একবর্ষজীবী ছোট বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছের উচ্চতা ১ থেকে দেড় মিটার এবং এই গাছের ছোট ছোট শাখা প্রশাখা চারদিকে ছড়ানো থাকে। এই গাছ চেনার অন্যতম উপায় হচ্ছে, আপাং গাছ মূলত বাগান কিংবা পরিত্যাক্ত যায়গায় জন্মে এবং এই বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের শাখার মাথায় লালচে সাদা ফুলের ছড়া ফোটে।
আপাং গাছের উপকারিতা
প্রিয় ভিজিটর, চলুন এপর্যায়ে আপাং গাছের উপকারিতা ও ব্যবহার জেনে নেওয়া যাক-
১. রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে
হঠাৎ কোথায় আঘাত লেগে কিংবা কোন কিছুর সাথে আঁচড় লেগে আমাদের শরীরের বাহ্যিক অংশ থেকে অনেক সময় রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। কোথাও কেটে ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা থামাতে কিছু আপাং গাছের পাতা নিন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর পর দুই হাতের মধ্যে নিয়ে ঢলা দিয়ে রস বের করে রস লাগালে রক্তক্ষরণ থামানো সম্ভব। তবে মারাত্মক জখম বা বেশি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যনা।
২. চুলকানি ও খোসপাঁচরা থেকে মুক্তি
খোসপাঁচরা ও চুলকানি একটি কমন সমস্যা আমাদের নিজেদের বা পরিচিতদের অনেকেরই এই সমস্যা দেখা যায়। যাহোক যারা খোসপাঁচরা ও চুলকানি সমস্যায় ভুগছেন তারা আপাং গাছের ৫ গ্রাম পরিমাণ পাতা ও দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিন। এরপর পানি ছেঁকে এই পানি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পান করুন। এই নিয়মে দশ থেকে ১৫ দিন পান করলে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
৩. শোথ রোগের চিকিৎসা
শোথ অনেকের কাছে ফোলা নামেও পরিচিত। এর কারন হচ্ছে এই রোগের কারনে শরীরের তস্যুতে তরল বা রস জমা হয় আর শরীরের কোন অংশ ফুলে ওঠে। শোথ সাধারণত বাহু ও পা-কে প্রভাবিত করে। এর কারনে আক্রান্ত অংশ ভারী ও আঁটসাঁট মনে হয়। ৫ গ্রাম আপাং গাছের পাতা ও ৫ গ্রাম কালোমেঘ একসাথে মিশিয়ে পানিতে জ্বাল দিন এবং এক কাপ পরিমাণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার সেবন করুন। তবে। দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে শোথ রোগের বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
৪. অর্শ রোগ সারায়
অর্শ মূলত মলধারের রোগ। এই রোগের ফলে মল ত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে রক্ত পড়ে। কখনও তা অত্যন্ত যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। আবার মলদ্বার ফুলে ওঠে, আবার কখনো বিনা ব্যাথায় রক্তপাত হয়। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়ে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে আপাং পাতা ও এই গাছের ডাটার ছেঁচে বা বেটে, ছেঁকে রস করুন। ১ চা চামচ রস নিয়িমিত সকাল ও সন্ধ্যায় ১ মাস পান করলে অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই রোগ হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
৫. মুত্র সংক্রমণ থেকে মুক্তি
মূলত মুত্রতন্ত্রে জীবাণুর সংক্রমন থেকে মুত্র সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। মুত্র সংক্রমণকে সংক্ষেপে ইউটিআই বলা হয়ে থাকে। এই রোগের ফলে জ্বালাপোড়া, হঠাৎ তীব্র মুত্র বেগ, ঠিক মতো না হওয়া, আবার লালচে ভাব বা রক্ত পরার মতো সমস্যা দেখা যায়। আবার অনেক সময় তলপেটে ও কমরের মাঝামাঝি ব্যাথা অনুভব হয়। এমন হলে আপনি নিয়মিত ২ থেকে ৩ বার দুই চা চামচ আপাং গাছ এর পাতার রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এভাবে নিয়মিত ১০-১২ দিন পান করলে মুত্র সংক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৬. দাদ রোগের উন্নতি
দাদ এক ধরনের চর্মরোগ। আপাং গাছের শুকনা ডাঁটা আগুনে পুড়ে ৮ গ্রাম পরিমাণ এবং জলপাই তিল তেল দিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন। এই পেস্ট দাদের উপরে ত্বকে সামান্য পরিমাণ লাগিয়ে দিন।
৭. আপাং গাছের শিকরের উপকারিত
আমাদের অনেকের বুক ধড়ফড়ানির সমস্যা থাকে। বুক ধড়ফড়ানি থেকে মুক্তি পেতে আপাং গাছ মূলসহ ছেঁচে ছেঁকে এর রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ পান করুন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিত পান করলে বুক ধড়ফড়ানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সর্বশেষ
সম্মানিত ভিজিটর, এখানে যে সকল উপকারিতার কথা বলা হয়েছে সবগুলো প্রাথমিক ও ভেষজ চিকিৎসা। তবে আপনার সমস্যা দীর্ঘদিনের হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
আমাদের লেখা নিয়ে আপনাদের মতামত কিংবা পরামর্শ জানাতে পারেন আমাদের সাথে। কোন বিষয়ে টিপস জানতে আমাদের সাইটে থাকা সার্চ বারে সার্চ করুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে এসএমএস করুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। জীবনে চলার পথে আল্লাহকে স্মরণ করুন।
আরও পড়ুনঃ কাজুবাদামের উপকারিতা