সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারগুলোর তালিকার প্রথম সারিতে কাজুবাদামের অবস্থান। বলা হয়ে থাকে ১ দিনে ৪ টি কাজুবাদাম খেলে ১০ টি উপকার পাওয়া যায়। অনেকে একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেটও বলে থাকে।
সম্মানিত ভিজিটর, আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি- কাজুবাদাম কি, খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, খাওয়ার সঠিক নিয়ম, কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, দাম, চাষ পদ্ধতি ও কাজু বাদাম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
Table of Contents
- কাজুবাদাম কি?
- কাজুবাদামের পুষ্টিগুণ
- কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- কাজুবাদাম এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অপকারিতা
- কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
- কাজুবাদামের দাম
- কাজুবাদাম কোথায় কিনতে পাওয়া যায়
- কাজুবাদাম চাষ পদ্ধতি
- সর্বশেষ
কাজুবাদাম কি?
কাজুবাদাম এর ইংরেজি অর্থ Cashew অনেকে একে Nut ও বলে থাকে। কাজুবাদাম হচ্ছে কাজু (কিডনি) আকৃতির একটি ফল যা কাজুগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এটি মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ যার উৎপত্তি ব্রাজিল, মধ্য আমেরিকা হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ও ব্যাক্তগত ভাবে চাষ করা হয়। ভারত, মালয়েশিয়া,কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার এবং তানজানিয়া সহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে।
কাজুবাদামের পুষ্টিগুণ
আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অভ এগ্রিকালচার এর ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা রেজাল্ট অনুসারে প্রতি ২৮ গ্রাম বা এক আউন্স কাজু বাদামের রয়েছে- ১৫৭ ক্যালরি, প্রোটিন ৫ গ্রাম, ফ্যাট ১২ গ্রাম, কার্বস ৯ গ্রাম, ফাইবার ৯ গ্রাম। এছাড়াও রয়েছে কপার ৬৭%, ম্যাগনেসিয়াম ২০%, ম্যাংগানিজ ২০%, জিঙ্ক ১৫%, ফসরাস ১৩%, আয়রন ১১%, সেলেনিয়াম ১০%, থিয়ামেইন ১০%, ভিটামিন কে ৮%, ভিটামিন বি৬ ৭%। এতে প্রায় রান্না করা মাংসের সমপরিমাণ প্রোটিন রয়েছে।
কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
1. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়ারহাউস
কাজুবাদামকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়ারহাউস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা মূলত ক্ষতিকর অনুগুলকে নিস্ক্রিয় করে আপনার শরীরকে সাস্থ্যবান ও সুস্থ রাখে। পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ও শরীরকে রোগমুক্ত থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাজুবাদাম পলিফেনল এবং ক্যারোটিনয়েডে সমৃদ্ধ আর এই দুই শ্রেণীর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অন্যান্য বাদামের মধ্যেও পাওয়া যায়।
2. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে কাজুবাদামের সুনাম রয়েছে। কারন কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি এবং চর্বি। উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। এতে বিদ্যমান চর্বি আমাদের শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। আর আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা মুক্ত রাখে ফলে সঠিক ওজন ব্যবস্থাপনায় জন্য বেশ কার্যকরী।
3. রক্তস্বল্পতা দূর
আমাদের মধ্যে অনেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। চেহারা দেখতে অনেকটা ফ্যাঁকাসে মনে হয়। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কাজুবাদাম খেতে পারেন। এতে থাকা কপার আপনাকে রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি দিবে।
4. চোখের উন্নতি করে
লুটেন এবং জিয়াএক্সথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখকে আলোক রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কাজুবাদামে রয়েছে পরিমাণ মতো লুটেন এবং জিয়াএক্সথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই চোখে ছানি পড়া থেকে বাঁচতে আপনি কাজু খেতে পারেন।
5. শক্তিবর্ধক
দেহের শক্তিবর্ধক হিসেবে অনেক খাবারের সুনাম রয়েছে। কাজু বাদাম এদের মধ্যে অন্যতম ও সেরা। এতে থাকা শক্তির মূল উপাদান কার্বোহাইড্রেট ভেঙে আমাদের শরীর গ্লুকোজে পরিণত করে। আর এই গ্লুকজ আমাদের শরীরের অঙ্গগুলো ও কোষের শক্তির প্রধান উৎস। এছাড়াও এটি যৌন সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
6. কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি
খালিপেটে বিশেষ করে সকালে এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সহজেই মুক্তি মেলে। এর কারন হচ্ছে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যার আমাদের খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং রেচন প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে।
কাজুবাদাম এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অপকারিতা
অনেকেই কাজু বাদাম পছন্দ করে। মজাদার ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই একটু পরপর খেতেই থাকে। প্রতিদিন ৪-৫ টি কাজুবাদাম খাওয়ায় উত্তম। তবে এর বেশি খেলে উপকারের বদলে অপকার হতে পারে। তাই কাজুবাদামের অপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি নিয়মিত কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে এর কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত কোন ওষুধ সেবন করেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খান।
কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
আসলে কাজুবাদাম খাওয়ার জন্য আলাদ কোন নিয়ম নেই। আপনি চাইলে খালি চিবিয়ে কিংবা অনেক ডেজার্ট আইটেমের সাথেও খেতে পারেন। তবে ভিজিয়ে খাওয়া উত্তম। কাজুবাদাম নিয়মিত নিয়ম করে ভিজিয়ে খেলে সাইট্রিক এসিডের মাত্রা, ইরিটবল বাউয়েল সিনড্রোম কমায় পাশাপাশি ট্যানিন দূর করে, কোলনের কার্যক্রম ভালো করে।
কাজুবাদামের দাম
১ কেজি কাজুবাদামের দাম ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা।
1 KG Cashew price in Bangladesh is anywhere between 1000 BDT to 1200 BDT.
কাজুবাদাম কোথায় কিনতে পাওয়া যায়
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন শপে কাজুবাদাম কিনতে পাওয়া যায়। সুপার শপ, মুদি দোকান, ফার্মেসী ও অর্গানিক খাবারের দোকানেও কাজু বাদাম কিনতে পাওয়া যায়।
কাজুবাদাম চাষ পদ্ধতি
বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতে বাণিজ্যিকভাবে কাজুবাদামের চাষ হয়ে থাকে। সম্ভাবনাময় ও পুষ্টিউপাদানে ভরপুর এই ফলটি চাষ করে আপনিও হতে পারে লাভবান। স্বাস্থ্যসচেতন লোকদের কাছে এর বেশ কদর রয়েছে। চলুন পর্যায়ে কাজুবাদাম চাষ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক-
মূলত কলাম ও বীজ এর সাহায্যে এর বংশবিস্তার ঘটে। এক একটি গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে তাই একবার ফলাতে পারলে আর কোন চিন্তা থাকে না। প্রথমে কাজুবাদাম গাছ রোপণের জন্য জমি তৈরি করতে হবে। ৬-৮ মিটার দূরত্বে ১ ঘন মিটার আয়তনের গর্ত তৈরি করুন এবং কয়েকদিন রোদে শুকাতে দিন এর পরে গর্তের মধ্যে সবুজ সার, গোবর, ইউরিয়া ও পরিমাণ মতো টিএসপি সার দিন। এগুলো ভালো করে মাটিতে মিশলে ১২-১৫ দিন অপেক্ষা করুন। কলম তৈরি করে বা সংগ্রহ করে পূর্বে তৈরি করা জমিতে চারা এগুলো রোপণ করতে হবে।
চারা রোপণের ৩-৪ বছর পড়ে ফলন আসে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা ও বছরে দুই একবার গোবর স্যার, পরিমাণ মতো এম পি ও টি এস পি সার দেওয়া যেতে পারে। একটি গাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কেই ফল পাওয়া যায়। তবে শুকিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে ১ কেজি হতে ২৫০ গ্রামের মতো বাদাম পাওয়া যায়।
সে হিসেবে একটি কাজু বাদাম গাচ থেকে বছরে ১২ কেজি থেকে ১৪ কেজি কাজুবাদাম পাওয়া যাতে পারে। এবং বিক্রি করে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়।
সর্বশেষ
সম্মানিত পাঠক, আশা করছি কাজুবাদামের উপকারিতা, ক্ষতি, দাম, চাষ পদ্ধতি, খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়ে গেছেন। এ সম্পর্কিত আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের প্রশ্ন করতে পারেন। যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজে। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন ও নিরাপদ থাকুন।