বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক অন্যতম। বর্তমানে সিটি ব্যাংক কয়েক ধরনের ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস দিচ্ছে।
প্রিয় ভিজিটর টিপসওয়ালী ফিন্যান্স – এর আজকের লেখা জুড়ে আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো বাংলাদেশের সিটি ব্যাংক লিমিটেড এর ক্রেডিট কার্ড, সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বিভিন্ন প্রকার কার্ডের ফিচার, সুবিধা, ও এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সমূহ:
চলুন এপর্যায়ে বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
১. সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড
সিটি ব্যাংকের যতগুলো ক্রেডিট কার্ড আছে সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার্ষিক ফি এই আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ডের। আবার সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা ও পাওয়া যায় এই কার্ডে। এর বাৎসরিক ফি ২৫০০০ এছাড়াও রেগুলার ক্রেডিট কার্ডের অন্যান্য ফি গুলো প্রায় সমান। সাইন আপ বোনাস, ট্রাভেল পেমেন্টে বিভিন্ন ডিস্কাউন্ট, ইনস্যুরেন্স সুবিধাসহ নানা বোনাস উপভোগ করতে চাইলে আপনার জন্য সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড। এটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স টিকেটে ১০% থেকে ২০% ক্যাশ ব্যাক ডিস্কাউন্ট পেতে পারেন। বর্তমানে এই কার্ড নিলে আপনি পাচ্ছেন দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে এক রাত্রি যাপন, ৬ টি কমপ্লিমেন্টারি ক্মপ্যানিয়ন প্রায়োরিটি পাশ লাউঞ্জ ভিজিটে, ২৫০০০ মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস পয়েন্ট, অনলাইন কেনাকাটায় ০% ইএমআই সুবিধা, ক্যাশ ব্যাকসহ আরও অনেক কিছু।
২. গোল্ড ক্রেডিট কার্ড
আপনি যদি কম বার্ষিক ফিতে ট্রাভেল, অনলাইন কেনাকাটার জন্য একটি ক্রেডিট কার্ড খুঁজেন তাহলে আপনার জন্য সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড ক্রেডিট কার্ড। এই কার্ড ধারীদের জন্য থাকছে বিশ্বজুড়ে ১৩০০ টিরও বেশি বিমানবন্দর লাউঞ্জে অ্যাক্সেস তবে এটি কেবল মাত্র বিদেশী বিমানবন্দরের জন্য এবং এর জন্য ৩২ ডলার ফি প্রযোজ্য। ট্রাভেলারদের জন্য বিমান ভাড়া, হোটেল ও অন্যান্য ট্রাভেল পেমেন্টে থাকছে নানা ক্যাশব্যাক ও রিওয়ার্ডস অফার। ক্যাফে বাজার, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, লে মেরিডিয়ান, ওয়েস্টাইন, আমারি, রেডিসন, স্কাইপুল রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট থাকছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান বাফেট অফার উপভোগ করার সুযোগ। অনলাইন কেনাকাটায় প্রতি ৫০ টাকা কিংবা ১ ডলার খরচের বিপরীতে পাবেন ১ মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট। এছাড়াও নানা এক্সক্লুসিভ বোনাস, ০% ইএমআই সুবিধা তো থাকছেই। আমেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড ক্রেডিট কার্ডের বাৎসরিক ফি ৫০০০ টাকা।
৩. সিটি আলো
ওয়েলকাম বোনাস, প্রতিবার কার্ড সুইপে ডাবল রিওয়ার্ড, ট্রাভেল সুযোগ সুবধা, ইনস্যুরেন্স, লাইফসস্টাইল সহ নানা সুযোগ সুবিধা পেতে চাইলে এই কার্ডটি। বর্তমানে এই কার্ডে সাইন আপ করলে পাচ্ছেন গাজীপুর গ্রীন ভিউ রিসোর্টে এক রাতের জন্য বুকিং দিলে এক রাত ফ্রি। এছাড়াও থাকছে পার্সোনাল হেয়ার ও বিউটি লিমিটেডের ১০০০ টাকার ভাউচার, সেবা এক্সওয়াইজেট এ প্রথম কেনাকাটায় ১০০০ টাকা ক্যাশব্যাক। তবে এই সুবিধা কার্ড চালু করার পর ২ মাস পর্যন্ত এভেইলএভেল থাকবে। এই কার্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে প্রতি বার অনলাইনে ১০০ টাকা খরচ করলে পাচ্ছে ১.৫ টাকা ক্যাশব্যাক। এছাড়াও যেকোনো ১০০ টাকা কিংবা ২ ডলার খরচে পাবেন ১ টাকা ক্যাশব্যাক। তবে প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা ক্যাশব্যাক উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া থাকছে ট্রাভেল পেমেন্টে ক্যাশব্যাক ডিস্কাউন্ট, ইনস্যুরেন্স সুবিধা, হেলথ কেয়ার বেনিফিট, বিভিন্ন ফাইব স্টার হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান বাফেট সহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা।
৪. আমেরিকান এক্সপ্রেস গ্রিন ব্লু
আমেরিকান এক্সপ্রেস গ্রিন ব্লু ক্রেডিট কার্ডে থাকছে ট্রাভেল পেমেন্ট ডিস্কাউন্ট, মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস, সহ অনলাইন কেনাকাটায় ০% ইন্টারেস্ট সুবিধা। যারা রিটেইল শপে বেশি কেনাকাটা করেন তাদের জন্য এটি উত্তম। পজ কিংবা অনলাইন কেনাকাটায় প্রতি ৫০ টাকা বা ১ ডলার খরচ করে আপনি পেতে পারেন ১ মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট। এছাড়াও নির্দিষ্ট সুপারমার্কেটে কেনাকাটায় প্রতি ৫০ টাকা খরচায় থাকছে ১০ মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস।
৫. আগোরা আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড
এই ক্রেডিট কার্ড সাইন আপ করলে পাচ্ছেন আগোরা হতে ২০০০ টাকা সমমূল্যের ওয়েলকাম প্যাক, প্রতি বছর পূর্তিতে পাবেন ১০০০ টাকা আগোরা ভাউচার। সারা বছরে আগোরা থেকে ২ লক্ষ টাকার কেনাকাটা করলে ১০০০ টাকার আগোরা গিফট ভাউচার এবং এর বাহিরে প্রতি ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করলে আরও ২০০০ টাকা মুল্যের আগোরা গিফট কার্ড পাবেন। এছাড়াও থাকছে আপনজন রিওয়ার্ড, লাইফস্ট্যাইল পন্য কেনাকাটায় ক্যাশ ব্যাক ও মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস পয়েন্ট। সহ নানা সুবিধা।
৬. ইউনিভার্সিটি অভ ঢাকা আমেরিকান এক্সপ্রেস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সিটি ব্যাংক বিশেষ সুবধা সম্বলিত ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। এই কার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট অনলাইন শপ কিংবা সুপারশপে কেনাকাটায় কিংবা অনলাইন পেমেন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিস্কাউন্ট, ক্যাশব্যাক সুবিধা, ট্র্যাভেল পেমেন্টের উপর ডিস্কাউন্ট সহ নানা বেনিফিট পেতে পারে।
৭. সিটি ম্যাক্স আমেরিকান এক্সপ্রেস
আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটা কিংবা আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপর ক্যাশব্যাক অফার উপভোগ করতে চান তাহলে আপনার জন্য সিটি ম্যাক্স আমেরিকান এক্সপ্রেস। নির্দিষ্ট অনলাইন শপ কিংবা সুপারশপ থেকে কেনাকাটার উপর থাকছে ২% ক্যাশব্যাক। এছাড়াও থাকছে বাইওয়ান গেট ওয়ান বাফেত লাঞ্চ, ডিনারের সুযোগ, এটিএম সুবধা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। আর সিটি ম্যাক্স আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি মাত্র ৫০০ টাকা।
৮. বিমান বাংলাদেশ আমেরিকান এক্সপ্রেস
বিমান বাংলাদেশ ও সিটি ব্যাংকের সমন্বয়ে বাংলাদেশ বিমান যাত্রীদের জন্য বিমান বাংলাদেশ আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড। ওয়েলকাম বোনাস হিসেবে থাকছে রয়েল টিউলিপ এ এক রাতের সাথে আরেক রাত ফ্রি থাকার সুযোগ, ঢাকা-কুয়ালালাম্পুর বিমান রুটে ও অন্যান্য বিমান টিকেটে বিশেষ ছাড়।
৯. সিটি ভিসা ক্রেডিট কার্ড
যতটুকু বুজলাম সিটি ব্যাংকের ভিসা ক্রেডিট কার্ডে তেমন কোন বিশেষ সুবিধা নেই। এর ফিচারগুলো দেখে মনে হচ্ছে ভিসার জনপ্রিয়তা থাকার কারনে অপশন হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে এই কার্ড ব্যবহার করে নানা রকম ইনস্যুরেন্স সুবধা পেতে পারেন।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
প্রায় সকল সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য একই ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন। তবে ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নির্ভর করবে আপনার আয়ের উপর। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যোগ্যতা নিচে দেওয়া হল-
চাকুরীজীবীদেড় জন্য- সর্বশেষ স্যালারি সার্টিফিকেট, বিগত তিন মাসের পে স্লিপ, ই-টিন সার্টিফিকেটের কপি, পাসপোর্ট কপি, অফিস আইডি কার্ডের কপি, ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিজনেস কার্ড, ২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি, আইডি কার্ডের কপি।
ব্যবসায়ীদের জন্য- ট্রেড লাইসেন্সের কপি, ই-টিন সার্টিফিকেট কপি, পাসপোর্ট কপি, বিগত ১২ মাসের ব্যাংক স্টেস্টমেন্ট, পাসপোর্টের কপি, বিজনেস কার্ড, ২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি, ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ছবি।
আবেদন করার নিয়ম
আপনি চাইলে অনলাইন হতে একটি সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এজন্য প্রথমে [thecitybank.com] এই সাইটে পরবেশ করুন। এর পর কার্ড অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার পছন্দের কার্ড সিলেক্ট করুন। প্রত্যেকটি কার্ডের ফিচার, সুবিধা, ও অন্যান্য বিষয়গুলো বিস্তারিত লেখা দেখতে পাবেন। নিচের দিকে থাকা গেট ইন টাচ বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে ফেলুন। ২ থেকে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে কার্ড ডিপার্টমেন্ট থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
ক্রেডিট কার্ডের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে আপনি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংকে থাকা এক্সিকিউটিভরা আপনাকে সাহায্য করবে।
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড কাদের জন্য?
আমরা অনেকেই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে ভুল ধারওনা পোষণ করি। তা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে অনেক লাভ। আসলে ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে বাকি বা ঋণ করার কার্ড। আপনি যদি অনেক বেশি অনলাইনে বা অফলাইনে কেনাকাটা করেন, বিল কিংবা ফি পেমেন্ট করতে হয় তাহলে আপনার জন্য ক্রেডিট কার্ড। অন্যথায় লোক দেখানর জন্য এর কোন দরকার নেই।
সর্বশেষ
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আমাদের লেখা নিয়ে কোন মতামত, প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ থাকলে শেয়ার করতে পারেন আমাদের সাথে।
উল্লেখ্য উপরে উল্লেখিত যে সকল বোনাস বা অফারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো এই আর্টিকেল পাবলিশ কালীন সময়ের। ব্যাংক চাইলে তাদের কোন অফার পরিবর্তন, চালু কিংব বন্ধ করে দিতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।