কমার্শিয়াল জিম ও বাসা বাড়িতে জিম করা অনেকটা আলাদা হয়ে থাকে। কারন বাসায় জিমের মতো সকল সরঞ্জাম থাকে না বা কেনার সামর্থ্য সবার নেই। পাশাপাশি জিম ট্রেইনারের অভাব তো থেকেই যায়। অনেকের আবার বাসায় জিমের জন্য ব্যায়াম করার পর কি কি খেতে হয় সে সম্পর্কেও ধারনা থাকে না।
সম্মানিত ভিজিটর, পুরুষ কিংবা মেয়ে সবার জন্যই শারীরিক ফিটনেস থাকা আবশ্যক। ফিটনেসের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করাও একান্ত আবশ্যক। শহর অঞ্চলে অনেক জিম রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট পাবেন পাশাপাশি ট্রেইনার তো থাকছেই। তবে আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলে জিমের সুব্যবস্থা নেই। অনেকের আবার সময় হয় না নিয়মিত জিমে গিয়ে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার।
আপনিও হয়তো বাসায় বসে জিম বা ব্যায়াম করার কথা ভাছেন। আর তাই আমাদের সাইটে আসা।
প্রিয় ভিজিটর আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো পুরুষ বা ছেলেদের জন্য বাসায় বসে ১০ টি ব্যায়াম বা ওয়ার্কআউট। আর সাথে ছবির সাহায্যে আমি আপনাদের বুজিয়ে দিব কিভাবে এগুলো করতে হবে। (নিচের দিকে খেয়াল করুন ১-১০ পর্যন্ত সবগুলো ব্যায়ামের ছবি দেওয়া আছে)।
বাসায় বসে নিয়মিত এই ব্যায়াম গুলো করলে আপনার শারীরিক ফিটনেস আসার পাশাপাশি আপনি ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি আপনাকে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকেও দূরে থাকতে সাহায্য করবে।
তো প্রিয় ভিজিটর আর কথা না বাড়িয়ে চলুন বাসায় বসে ১০ টি জিম ওয়ার্কআউট বা ব্যায়াম করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক-
১. জাম্পিং জ্যাক – ব্যায়াম করার নিয়ম
এই ব্যায়ামটি আপনার সম্পূর্ণ শরীরকে লক্ষ্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি অন্যতম সেরা কার্ডিও ব্যায়াম। বাসায় জিমের ব্যায়ামের প্রতিদিনের তালিকায় এটি যোগ করার নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। এটি আপনার হার্ট শক্তিশালী করার পাশাপাশি শক্তিশালী পেশী গঠন, ওজন হ্রাস, শক্তিশালী হাড় তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ব্যায়াম আপনার স্ট্রেস দূর করে এবং মেজাজকেও উন্নত করে। সর্বোপরি শক্তিশালী দেহ গঠন, ও উন্নত মস্তিস্ক গঠনে জাম্পিং জ্যাক খুবই কার্যকরী।
জাম্পিং জ্যাক ব্যায়াম করার নিয়ম: আপনার পা দুটি একসাথে এবং দু হাত নিচের দিকে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। একই সাথে দুই হাত উপরের দিকে নিয়ে যান ও পা দুই দিকে ছড়িয়ে দিন। একই ভাবে আবার পূর্বের যায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। এভাবে ১০-১৫ বার করতে থাকুন।
২. প্ল্যাঙ্কিং – ব্যায়াম করার নিয়ম
এটি রক অ্যাবস এর জন্য সেরা এটি একটি অনুশীলন। বিগিনার বা নতুনদের জন্য শক্তিশালী অ্যাবস গঠন ও কাঁধ, বাহু ও পিঠকে শক্তিশালী করবে এই ব্যায়াম। আর এই ব্যায়াম বিভিন্ন ভাবে করা যেতে পারে। নতুনদের জন্য বাড়িতে জিম করতে এই ব্যায়াম একবারে ৩০ সেকেন্ড করে করা উত্তম।
প্ল্যাঙ্কিং করার নিয়ম: ছবির মতো করে সামনের দিকে হাত রাখুন। খেয়াল রাখুন আপনার হাত যেন ৯০ ডিগ্রীতে বাকা থাকে ঠিক পুশ আপ আবস্থানে। পা থেকে মাথা একদম সোজা করে ফেলুন। যতখন পারেন এভাবে থাকুন।
৩. ক্রস ক্রাঞ্চ – ব্যায়াম করার নিয়ম
মূলত অ্যাবস এবং তির্যক পেশীগুলোর একটি কার্যকর ও সহজ ব্যায়াম। এই ব্যায়াম আপনার কোরকে শক্তিশালী করবে এবং আপনার পেটের পেশী শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি ভুঁড়ি কমাতেও বেশ ভুমিকা পালন করে।
ক্রস ক্রাঞ্চ করার নিয়ম: প্রথমে পা দুটি লম্বা সমতল করে দিন। ছবির মতো করে মাথায় আলতো করে হাত রাখুন। এবারে বাম পা বাম কাঁধের দিকে নিয়ে আসুন এবং কনুই দিয়ে আপনার হাঁটু ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এবার বাম পা সোজা করে দিয়ে একই ভাবে ডান পা নিয়ে আসুন এবং কনুই দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
৪. সাইড প্ল্যাঙ্ক
সাইড প্ল্যাঙ্কও একটি অন্যতম সহজ তবে কার্যকরী ব্যায়াম। এটি শক্তিশালী অ্যাবস গঠনে সাহায্য করে।
যেভাবে সাইড প্ল্যাঙ্ক করবেন: প্রথমে কাদের নিচে হাতের তালু রাখুন এবারে ছবির মতো এক পায়ের সাথে অন্য পা রাখুন। বিপরীত হাত উপরের দিকে সোজা করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার পাছা বা নিতম্ব উপরের দিকে তুলুন। এবং যত সময় পারেন এই আবস্থানে থাকুন। এভাবে এক সাউড বা হাত পরিবর্তন করে অন্যহাত দিয়ে করুন।
৫. স্কোয়াটস
প্রতিদিনের ওয়ার্কআউটে স্কোয়াটস যুক্ত করার মাধ্যমে আপনি আপনার বডিতে একটি সুন্দর শেপ নিয়া আসতে পারেন। পুরুষদের নিম্ন পেশী অর্থাৎ পেট, কোমর, পাছা ও রান শক্তিশালী করতে এই ব্যায়াম বেশ ভাল ভূমিকা পালন করে।
যেভাবে স্কোয়াটস করবেন: ঠিক ছবির মতো করে দুই পা ফাকা করে হাত দুইটি সামনের দিকে সমান্তরাল করে নিতম্ব বা পাছার দিক পিছনের দিকে দিয়ে হাঁটু ৬০ ডিগ্রীতে বাকা করে ও পায়ে ভর করে বসুন আবার সোজা হয়ে দাঁড়ান। এভাবে ২৫ টি স্কোয়াট দিন। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
৬. লুঙ্গস
বাসায় বসে কোন সরঞ্জাম ছাড়া জিম করতে আপনার নিয়মিত ওয়ার্কআউটের তালিকায় এই ব্যায়মটি আপনার হাঁটুর নিচের অংশ রান ও পেটের পেশীকে শক্তিশালী করবে।
যেভাবে এই ব্যায়াম করবেন: ঠিক ছবির মতো করে কোমরে দুই হাত দিয়ে উভয় হাঁটু ৯০ ডিগ্রী কনে বাকান। এক পড়ে আপনার সুবিধা মতো শরীর সোজা রেখে এক পা সামনে দিয়ে এগিয়ে যান। আপনার পায়ের হিলে ভর রেখে আগের যায়গায় ফিরে আসেন।
৭. পুস-আপ ব্যায়াম করার নিয়ম
পুস-আপের সাথে আমরা প্রায় সবাই-ই কম বেশি পরিচিত। পুস-আপ মূলত আপনার বাহুর পেশী ও বুকের পেশী শক্তিশালী ও উন্নত করে।
পুস-আপ দেওয়ার নিয়ম: ঠিক ছবির মতো করে কাঁধের সোজাসুজি দুই হাত রাখুন। এর পর দুই পা সোজা করে মাথা ও পা একটি সরররেখার মতো সোজা করেন। হাতের তালুতে ভর করে শরীর উপর নিচ করেন। খেয়াল রাখবেন হাতের কনুই যেন দেহের কাছাকাছি ও কোমর, পা, মাথা সোজাসুজি থাকে।
৮. হাই কিন
উরু ও হিপের পেশীর উন্নতির জন্য হাই কিনস বেশ কার্যকর। বাড়িতে বসে জিম করতে চাইলে আপনার শরীর চর্চার তালিকায় হাই কিনস রাখুন।
যেভাবে এই ব্যায়াম করবেন: প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এক হাতের আঙুলের উপরে অন্য হাতের আঙ্গুল রাখুন। ঠিক ছবির মতো করে এক পায়ের উপর ভর করে অন্য পাইয়ের হাটু ভাজ করে উপরের দিকে তুলুন এবং হাতের তালু দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করুন। এভাবে দুই পা পুনরাবৃত্তি করুন। ভাল করে বুজতে ছবির দিকে খেয়াল করুন।
৯. রাশিয়ান টুইস্ট
রাশিয়ান টুইস্ট কিছুটা ক্রস ক্রাঞ্চ এর মতো তবে ভিন্নতা আছে। মূলত পেটের পেশীর উন্নতির জন্য এই ব্যায়াম। আপনার ভুঁড়ি কমতে এটি সাহায্য করবে।
যেভাবে করবেন: আপনার ধর ৪৫ ডিগ্রী পিছনে ঝুঁকে বসুন, ঠিক ছবিতে দেখানোর মতো করে মাথার দুই পাশে হাত রাখুন। আপনার এক পা সোজা রেখে অন্য পা একটু উপরে তুলে হাঁটু ভাজ করেন যেন ভি (V) এর মতো শেপ চলে আসে। যে পা ভাজ করবেন সেই দিকে মাথা ঘুরান। এভাবে এক পায়ের পর অন্য পা করুন।
১০. দড়ির লাফ
দড়ির লাফের সাথে আমরা অনেক পরিচিত। স্কুলে থাকা কালীন সময়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েদের অন্যতম একটি খেলা হিসেবে এর যায়গা থাকতো। এছাড়া আমরা মেয়েদের বাড়িতে দল বেধে এই খেলা খেলতে দেখতাম। আপনার শরীরে চর্বি কমাতে এর ঝুড়ি নাই। পাশাপাশি এটি আপনার মাংসপেশীকে টোন করতে সাহায্য করবে।
দড়ির লাফ দেওয়ার নিয়ম: খেলাধুলার সরঞ্জাম বা ফিটনেস সামগ্রী বিক্রির দোকানে স্কিপিং রোপ কিনতে পাওয়া যায়। হাতে রোপ বা দড়ি নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পায়ের নিচ থেকে মাথার উপর দিয়ে দড়ি বা স্কিপিং রোপ ঘুরিয়ে আনুন।
সতর্কতা
আমরা অনেকেই বিশেষ করে যারা আগে কখনও কোন জিমে যাই নি বা ট্রেইনারের কাছ থেকে জিমের নিয়ম শেখা হয় নাই তারা এই ভুল করে থাকি। আর সেটা হচ্ছে, বাসায় ব্যায়াম বা জিম করার আগে একটু হাটাহাটি করুন, হাত ও শরীরের অন্যান্য অংশ একটু রানিং করে নিন। জিমের ভাষায় একে ওয়ার্ম-আপ বলে থাকে। আর প্রথমেই ভারী কোন কিছু উত্তোলন বা ভারী সরঞ্জাম দিয়ে জিম করা শুরু করা থেকে বিরত থাকুন। শুধু ব্যায়াম বা জিম করার মাধ্যমেই শরীর ঠিক রাখা সম্ভব না। এজন্য আপনাকে খাদ্য তালিকায়ও নজর দিতে হবে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা দেখা নিন।