ঔষধি গাছগুলোর মধ্যে অর্জুন গাছ অন্যতম। আগে রাস্তার পাশে সারি সারি অর্জুন গাছ দেখা যেত। এই গাছ বেশি নজরে আসতো যখন এর ছাল তোলা হতো। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অর্জুন গাছ ছিল। রাস্তা সংস্কারের অজুহাতে এখন একটা গাছও নেই।
যাহোক, বইয়ের পাতায় দুই এক বার পড়লেও আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই এই গাছ অচেনা। প্রিয় ভিজিটর আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি- বিশ্বের বিখ্যাত হেলথ ম্যাগাজিন ও বিশেষজ্ঞদের মতে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা, ঔষধি গুন, অর্জুন ছাল খাওয়ার নিয়ম বা কোন নিয়মে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায় ও এই গাছ এবং ছাল নিয়ে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
অর্জুন গাছ পরিচিত
ইংরেজিতে Terminalia Arjuna বা অর্জুন গেছ একটি ওষুধি উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকে নানা রোগের চিকিৎসায় এই গাছ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে এই গাছের ছাল বেশ উপকারী ও রয়েছে নানা ওষুধি গুন। অর্জুন গাছের উচ্চতা সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ মিটার হয়ে থাকে।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা
চলুন এপর্যায়ে এই গাছের ও ছালের নানা উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-
১. হৃদরোগ থেকে মুক্তি
আমাদের অনেকেরই বুক ধড়ফড় করার সমস্যা আছে। অর্জুনের ছাল এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এটি বেশ কাজ করে। নিয়মিত সকালে শুকনো অর্জুন ছালের গুঁড়া, চিনি ও গরুর দুধ খেলে বুক ধরফড় কমে।
২স্কিনের পরিচর্যায় অর্জুন
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অর্জুনের নানা ফেস প্যাক কিনতে পাওয়া যায়। এই গুঁড়ার সাথে মধু মিশিয়ে ব্রনের উপরে প্রয়োগ করলে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি মেচেতার দাগ থেকেও মুক্তি মেলে।
৩. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি
আমাদের অনেকের হজম জনিত নানা সমস্যা থাকে। নিয়মিত অর্জুনের ছাল খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এটি আপনার খাদ্যতন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। তাই পেটে গ্যাস জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি অর্জুন গাছের ছাল সেবন করতে পারেন।
৪. লিভারের সুস্থ রাখে
লিভাবের সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। আর একবার লিভার আক্রান্ত হয়ে গেলে তা খুবই মারাত্মক। তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহনে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। লিভার সুস্থ রাখতে মাঝে মাঝে অর্জুনের ছাল বা এর গুঁড়া রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে সেই পানি পান করুন।
৫. মাড়ির সমস্যা থেকে মুক্তি
দাঁতের মাড়ির ব্যাথা, মাড়ির গোরা থেকে রক্ত বের হওয়ার মতো সমস্যা আমাদের অনেকেরই রয়েছে। আর এটি অন্যতম একটি সাধারন সমস্যা। WHO এর তথ্য মতে বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনে মাড়ির সমস্যাস ভোগে। অর্জুন গাছের ছাল মাড়ির ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়। এই জন্য আপনি সকালে দাঁতের মাজনের মতো করে ছালের গুঁড়া ব্যবহার করুন।
৬. যৌন-সক্ষমতা বৃদ্ধি
মানুষের যৌন সমস্যা একটি কমন সমস্যা। তবে কিছু নিয়ম মেনে চিকিৎসা করলে এই মধুর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কোন উত্তেজক কিংবা বাজারে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে কোন ঔষধ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন। অর্জুন গাছের ছালে থাকা স্যাপোনিন আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৭. রক্তপিত্ত থেকে মুক্তি
রক্তপিত্ত আরেকটি সাধারন সমস্যা। আমাদের কারও রক্তপিত্ত হলে আমার খুবই ভয় পাই। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মূলত শরীর অতিরিক্ত গরম হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। পানিতে ভিজিয়ে রাখা অর্জুনের ছাল সেবন করলে রক্ত পিত্ত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৮. শুষ্ক কাশি কমায়
রাতে সরাসরি ফ্যানের বাতাস লাগলে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য ঠাণ্ডা লেগে আমাদের অনেকেরই শুষ্ক কাশি হয়ে থাকে। অনেক সময় দীর্ঘদিন এই কাশি থেকে যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে আপনি অর্জুন গাছের ছালের সাহায্য নিতে পারেন। অর্জুন গাছের ছাল আর বাসক পাতার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন শুকিয়ে গেলে গুঁড়া করুন এবং মধু বা মিছিরর সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। আশা করি মুক্তি পাবেন। কাশি সারতে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস খেতে পারেন।
৯. রক্ত আমাশয় থেকে মুক্তি
আমাদের অনেকেরই রক্ত আমাশয় হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় আমরা ভয় পেয়ে যাই। রক্ত আমাশয় ধরা পড়লে ৫ গ্রাম পরিমাণ কাঁচা অর্জুন ছাল বেটে পিষে অথবা গুঁড়া নরমল পানির সাথে খেলে রক্ত আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০. ক্যান্সার প্রতিরোধ
নিয়মিত অর্জুন গাছের ছাল সেবন শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১১. অর্জুন ব্যাথা সারতে
অনেক সময় অসাবধানতার কারনে আমরা হাত পা মচকে ব্যাথা পাই। আবার সেখানে চিড় হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে ব্যাথা যায়গায় অর্জুনের ছাল বেটে এর সাথে রসুন বাটা মিশিয়ে বা একসাথে বেটে লাগান। রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে অর্জুন ছালের গুঁড়া বা পাউডার মিশিয়ে পান করতে পারেন।
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম
এই গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। নিয়ম করে রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো অর্জুনের শুকনা ছাল কিংবা গুঁড়া ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি ছেকে পান করে ফেলুন।কাশি থেকে মুক্তি পেতে অর্জুনের গুঁড়ার সাথে মধু কিংবা মিছরি মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
ছালের দাম
১ কেজি অর্জুন গাছের ছালের পাউডারের দাম ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। অর্গানিক পন্যের দোকান, অনলাইন শপ কিংবা ফার্মেসীতে এই গুঁড়া কিনতে পাওয়া যায়।
সর্বশেষ
আপনার কোন শারীরিক সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। নিয়মিত কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।