https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/10/credit-card.jpg

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৬১ টি তালিকভুক্ত ব্যাংক রয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সংখ্যা ৬ টি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৩টি, বিশেষায়িত ৩টি এবং ৯টি বিদেশী ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি প্রায় সকল ব্যাংকেরই ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। প্রত্যকেটি ব্যাংকই বিশেষ কিছু শর্তের বিনিময়ে Credit card প্রদান করে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো স্যালারি, ব্যাবসায় ও নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিপোজিট বা জামানতের বিপরীতে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। চাকুরিরজিবী, ব্যবসায়ী ও জামানতের বিপরীতে দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে একটি হচ্ছে লোকাল বা দেশের মধ্যে ব্যবহারের জন্য অন্যটি হচ্ছে দেশ-বিদেশ সকল স্থানে ব্যবহার করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য আলাদা হলেও বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকের কার্ডের জন্য আবেদন করতে প্রায় একই ধরনের ডকুমেন্টস প্রয়োজন ও নিতিমালাও প্রায় একই।

সম্মানিত ভিজিটর আজকের লেখা জুড়ে আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো- ক্রেডিট কার্ড কি, ক্রেডিট কার্ডের প্রকারভেদ, বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে, কিভাবে আবেদন করবেন, সুদের হার, চার্জ, ফি ও অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত।

Table of Contents

ক্রেডিট কার্ড কি?

সাধারণত ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানি কিংবা ব্যাংক দ্বারা প্রদান করা এক প্রকার পাতলা প্লাস্টিক কার্ড যা গ্রহীতাকে নগদ টাকা উত্তোলন, বিভিন্ন সার্ভিস বা পন্যে কেনার বিনিময়ে মূল্য প্রদানের অনুমতি প্রদান করে। নির্দিষ্ট চুক্তির বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদ সহ কিংবা সুদ ছাড়া গ্রাহকের পক্ষ্য হয়ে পূর্বের পরিশোধিত অর্থ Credit Card প্রদানকারীকে পরিশোধ করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ডের প্রকারভেদ

ক্রেডিট কার্ড মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথা- সাধারণ ও প্রাইভেট ক্রেডিট কার্ড।

সাধারণ ক্রেডিট কার্ড– এই ধরনের ক্রেডিট কার্ডগুলো সাধারণত বিভিন্ন ট্রেডমার্ক যেমন- ভিসা, মাস্টারকার্ড, এএমএক্স এর আন্ডারে প্রদান করা হয়ে থাকে এবং অধিকাংশ মার্চেন্ট এগুলো গ্রহণ করে। এই ধরনের কার্ডগুলোতে ব্যাংক বা ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলো প্লাটিনাম, গোল্ড, ক্লাসিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে আলাদা আলাদা সুযোগ সুবিধা অফার করে থাকে।

প্রাইভেট ক্রেডিট কার্ড– এই ধরণের Credit Card নির্দিষ্ট কিছু মার্চেন্ট গ্রহণ করে এবং এর ব্যবহার সীমিত।

বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ড যেমন- ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিসকভার, আমেরিকান এক্সপ্রেস বিভিন্ন ব্যাংক, ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানি ও ক্রেডিট ইউনিয়ন দ্বারা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে সবাই চাইলেই ক্রেডিট কার্ড পায় না। এ জন্য নুন্যতম যোগ্যতা থাকা দরকার। বাংলাদেশে Credit Card পাওয়ার যোগ্যতা ও এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিচে দেওয়া হল-

চাকুরীজীবীদের জন্য– সর্বশেষ ৩-৬ মাসের পে স্লিপ বা স্যালারি সার্টিফিকেট, ই-টিন সার্টিফিকেটের কপি, পাসপোর্ট থাকলে ও বিদেশী মুদ্রায় পেমেন্ট করতে পাসপোর্টের কপি, অফিস আইডি কার্ডের কপি, সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিজনেস কার্ড (যদি থাকে), ২ কপি ল্যাব প্রিন্ট পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের কপি।

ব্যবসায়ীদের জন্য- ট্রেড লাইসেন্স এর কপি, ই-টিন সার্টিফিকেটের কপি, পাসপোর্ট থাকলে পাসপোর্টের কপি, সর্বশেষ ৬-১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিজনেস কার্ড, ২ কপি ল্যাব প্রিন্ট পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের কপি। নমিনির ছবি ও আইডি কার্ডের কপি।

আবেদন করার নিয়ম

উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আপনি যে ব্যাংক বা ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানি থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে চান সেই প্রতিষ্ঠানের নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে অনলাইনেও আবেদন করতে পারেন। উদাহরন স্বরূপঃ সিটি এর ক্রেডিট কার্ড নিতে চাইলে তাদের অফিসিয়াল সাইটে ভিজট করুন। এখানে Card অপশোনে ক্লিক করার পর নিচের দিকে গেট ইনটু টাচ এ ক্লিক করুন এবং আপনার ইনফরমেশন দিয়ে সাবমিট করুন। এর পরবর্তী কয়েক কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংক প্রতিনিধি আপনার সাথে।

ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারেস্ট রেট

বাংলাদেশে ব্যাংগুলোর এভারেজ ক্রেডিট কার্ড ইন্টারেস্ট রেট ১.৫০% থেকে ২.৫০% পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ প্রদান করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ডের অন্যান্য ফি ও চার্জ

বার্ষিক ফি, সাপ্লিমেন্টারী কার্ড বার্ষিক ফি, কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফি, লেট পেমেন্ট ফি, ক্যাশ এডভান্স ফি, ওভার লিমিট চার্জ, মাসিক সুদ, ইএমআই ইন্টারেস্ট, আউট অভ টাউন চেক সংগ্রহ ফি, কাভারেজ ফি, ব্যালেন্স ট্র্যান্সফার ফি, মাসিক ব্যালেন্স ট্রান্সফার ইন্টারেস্ট, সার্টিফিকেট ফি প্রভৃতি।

ব্যবহারের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

একটি ক্রেডিট কার্ড থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে নগদ টাকা দিয়ে বিল প্রদান করতে হয় না। অর্থাৎ হাতে টাকা না থাকলেও যেখানে Credit Card গ্রহণ করে সেখান থেকে কোন কিছু কেনা বা বিল পেমেন্ট করা যায়। এছাড়া অন্যান্য সুবিধার মধ্যে- বোনাস, সেবিংস একাউন্টের উপর প্রভাব ফেলে না, কোন ভুয়া বা অনাকাঙ্খিত বিল চাইলেই থামিয়ে দেওয়া যায়, ইমারজেন্সি কোন প্রয়োজনে নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন- ইন্টারেস্ট বা সুদ প্রদান করা, কার্ড পেলে অনেকেই অযথা খরচা ও কেনাকাটা করা শুরু করে, সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে বাড়তি ফি প্রদান, এছাড়াও এতে বিভিন্ন ধরনের চার্জ থাকে।

কিছু টিপস

অফারের ফাদে পা না দেওয়া

টেলিভিশন অনলাইনে অনেক রঙচটা বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন যে ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করলে এই সেই সাত সতেরো ডিস্কাউন্ট পাবেন। এই বিজ্ঞাপনের ফাদে পা দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনা-কাটা থেকে বিরত থাকুন। তবে সঠিক ০% ইএমআই বা অফার লুফে নিতে পারলে আপনি লাভবান হতে পারেন।

বিল পরিশোধের তারিখ চেক করুন

আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যে কেনাকাটা করছেন তার বিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে আপনাকে বাড়তি ফি ও সুদ প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি এটি আপনার স্কোরও নষ্ট করবে।

ফি ও বিলগুলো মাথায় রাখুন

সব ধরনের ব্যাংকের কার্ডের ফি ও চার্জ একই না। পাশাপাশি সকল কার্ডের সাহায্যে আপনি সকল সুবিধা পাবেন না। তাই আপনার প্রয়োজন খুঁজে বেড় করেন। আপনার প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে আপনি যে ব্যাংকের কার্ড নিতে চাইছেন সেটি আপনাকে সুযোগ দিবে কিনা।

সর্বশেষ

প্রিয় ভিজিটর, আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আমাদের লেখা নিয়ে আপনার কোন মতামত কিংবা পরামর্শ থাকলে শেয়ার করুন আমাদের সাথে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আরও পড়ুনঃ বিমানে চড়ার নিয়ম