মুখ ধোঁয়ার পর আপার মুখ সুকিয়ে যাচ্ছে? বেশ ফ্যাঁকাসে লাগছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে আপনার স্কিন শুষ্ক। বিশেষ করে শীতকালে শুষ্ক স্কিনের জন্য আমরা নানা ধরনের লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। তবে আপনি কি একবারও প্রাকৃতিক উপায় আপনার ফেসের শুষ্কতা দূর করার উপায় খুঁজেছেন? প্রিয় ভিজিটর আজকের লেখায় কথা হবে শুষ্ক স্কিনের জন্য ৫ টি ঘরোয়া উপায়ে তৈরি করা যায় এমন ফেস প্যাক ও ফেস প্যাক বানানোর নিয়ম নিয়ে। আশা করছি আমাদের লিস্টে দেওয়া ফেস প্যাক গুলো নিয়মিত ব্যবহারে আপনার মুখের স্কিনের শুষ্কভাব দূর করতে পারবেন খুব সহজে ও অল্প দিনের মধ্যে।
১ জাফরান ও দুধের ফেস প্যাক বা ফেস মাস্ক
কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই রূপচর্চায় জাফরান ও দুধেরব্যবহার লক্ষ করা যায়। জাফরান ও দুধ দিয়ে খুব সহজেই আপনার স্কিনের জন্য ঘরে বসেই একটি ফেস মাস্ক বা ফেস প্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন। এই ফেস্প্যাক নিয়মিত ব্যবহারে আপনার স্কিনের শুষ্কভাব দূর হয়ে যাবে। জাফরানের বিশেষ উপাদান ও দুধের প্রোটিন আপনার ত্বককে পুষ্ট ও উজ্জ্বল করতে দ্বিগুণ কাজ করবে।
জাফরান ও দুধ দিয়ে যেভাবে ফেস প্যাক বানাবেনঃ ১-২ টি আসল জাফরানের সাথে দুই টেবিল চামচ তাজা ঠাণ্ডা দুধ মেশান। এর পর আপনার মুখের এবং ঘাড়ে বা গলায় এপ্লাই করুন। ৪০ মিনিটের মতো রাখুব এবং শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন।
২ অ্যাভোকাডো, মধু এবং কলার ফেস প্যাক
আভ্যাকাডোতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও মিনারেল রা ত্বকের গভিরে প্রবেশ করে ত্বকের পুষ্টি যোগায়। আর আয়ুর্বেদী শাস্রে মধুর কদর নতুন কিছু নয়। মুখের ব্ল্যাকহডস বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে মধুর বিশেষ ব্যবহার খেয়াল করা যায়।
অ্যাভাকাডোর সাথে একটি পাকা কলা এবং পর্যাপ্ত পরিমান মধু নিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন। এই ফেস প্যাকটি আপনার মুখে ও শরীরের কোথাও দাগ থাকলে সেখানে ব্যবহার করুন। মুখের শুষ্কভাব দূর করার পাশাপাশি এটি আপনার স্কিনের দাগ দূর করতেও বেশ কার্যকরী। এছাড়া এই ফেস মাস্কটি আপনার মুখে ইনস্ট্যান্ট মশ্চারাইজার এনে দিতে সক্ষম।
৩ গোলাপ জল, গ্লিসারিন ও ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ফেস মাস্ক
গোলাপ জল গ্লিসারিন ও ডিম তিনটি উপাদানই অনেক সহজলভ্য এবং আমাদের প্রত্যেকের বাসায়ই এটি কম বেশি কেনা হয়। এই সহজলভ্য উপাদানগুলো আপনার মুখের শুষ্কতা দূর করতে অনেক বেশি কার্যকরী।
যেভাবে ফেস মাস্ক তৈরি করবেনঃ একটি বাটিতে ডিম একটি ডিম ভেঙে ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে নিন। ডিমের সাদা অংশের সাথে এক টেবিল চামচ গ্লিসারিন ও দুই টেবিল চামচ গোলাপ জল নিন। এবং একসাথে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন। এবার এই ফেস প্যাকটি আপনার মুখের স্কিনের এপ্লাই করুন। ত্রিশ মিনিট পর ঠাণ্ডা নরমাল পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাকটি আপনার মুখের স্কিনকে মসৃণ ও শুষ্কতা দূর করতে বেশ কার্যকরী।
৪ কলা ও নারিকেলের দুধ
নারিকেল হতে নির্যাসিত দুধ ও কলার ফেস প্যাক ও আপনার মুখের শুষ্কতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে আপনার মুখের শুষ্কভাব দূর করতে অনেক কার্যকরী তবে এ জন্য দীর্ঘ দিন বা কয়েক মাস নিয়মিত এই ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
একটি পাকা কলা ও দুই টেবিল চামচ নারিকেলের দুধ দিয়ে তৈরি করা পেস্ট আপনার মুখে স্কিন ক্রিম এর মতো করা লাগান। এবং এক ঘণ্টার মতো সময় রেখে শুকিয়ে গেলে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। নারিকেলের দুধে থাকা ফ্যাটি এসিড আপনার মুখে মশ্চারাইজার এনে দিতে বেশ কার্যকরী।
৫ ছোলার গুঁড়া, বাদাম ও দুধ
একটি বাটি বা বোল নিন। তিন টেবিল চামচ ছোলা গুঁড়া, দুটি বাদামের গুঁড়া ও ৪ টেবিল চামচ হালকা গরম দুধ নিন। ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। পেস্টের মতো হয়ে গেলে আপনার মুখে এপ্লাই করুন। ৪৫ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ব্যবহারে ছোলা, বাদাম ও দুধের এই ফেস প্যাকটি আপনাকে একই সাথে ময়শ্চারাইজিং, উজ্জ্বল এবং পুষ্টিকর ফেস এনে দিবে।
ফেস প্যাক কি?
ফেস প্যাক হচ্ছে ভিবিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ যা কিনা মুখের স্কিনের রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। ফেস প্যাক অনেকের কাছে ফেস মাস্ক নামেও পরিচিত। উনবিংশ শতাব্দীতে এর প্রচলন ঘটে। সে সময়ে আমেরিকার ওহিও প্রদেশের মাদামে রওলি নামন একব্যাক্তি এই ফেস প্যাক বা ফেসিয়াল মাস্ক আবিস্কার করেন। এবং ১৮৭৫ সালে এটি পেটেন্ট করা হয়েছিল।
কোন সময় ফেস প্যাক বা ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত?
আসলে এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। আপনার হাতে যখন পর্যাপ্ত সময় থাকে তখন ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উত্তম। আমাদের যেহেতু দিনের বেলায় অনেক কাজ থাকে তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে যদি এমন হয় যে আপনি এমন একটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে যাচ্ছেন যা কিনা পরের দিনের হন্য আপনার ত্বককে হাইড্রেট করে তবে সকালের দিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। আবার যদি এক্সফোলিয়েট করে তবে রাতের দিকে ব্যবহার করা উত্তম।
আরও পড়ুনঃ মুলতানি মাটি