https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/02/Pedicure-and-manicure-Bangla.jpg

পেডিকিওর মেনিকিওর করার নিয়ম: লকডাউনের জন্য পার্লার এর দুশ্চিন্তা? বাসায় বসে বসে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থেকে কখনও নিজের জন্য সময় বের করা যায় না? আবার বের করলেও নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়াও সম্ভব হয়ে উঠে না যখন কিনা এই সময় নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা টা খুব জরুরী? বর্তমান পরিস্থিতি-তে করোনাভাইরাস এর জন্য পার্লার যাওয়া বন্ধ। তবে পার্লারের আসায় বসে থাকবেন কেন? নিজের শরীরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন-তার জন্য ঘরে বসেই কয়েকটি পন্য বা উপাদান ব্যবহার করে পেডিকিওর ও মেনিকিওর করা সম্ভব। 

শুধু ভাই-রাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাচাঁর জন্য না নিজেদের সময় ও অর্থ বাচাঁনোর জন্য হলেও ঘরে বসে পেডিকিওর ও মেনিকিওর করা শ্রেয়। নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপার এ জানলেও কিভাবে কি কি উপায় পেডিকিওর ও মেনিকিওর করবেন সে বিষয় ও জানতে হলে আজকের আরটিকেল টি আপনার জন্য। তবে আর দেরি কিসের? চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘরোয়া উপায় পেডিকিওর ও মেনিকিওর করার পদ্ধতি বা টিপস। How to do pedicure and manicure at home in Bangla.

পেডিকিওর কি?

Pedicure – পেডিকিওর মুলত পায়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করা কে বোঝায়। আমাদের পায়ে বিশেষ করে নখের জায়গা দেখা যায় ময়লা জমে থাকে, শক্ত হয়ে থাকে এবং আঙুলের আশেপাশে হাল্কা ছোপ ছোপ ময়লা ছাপ রয়ে থাকে। পায়ের তলায় চামড়া শক্ত হয়ে যায়, ময়লা হয়ে থাকে এবং চামড়া উঠে উঠে থাকে ইত্যাদি।

পেডিকিওর করার নিয়ম 

আপনি চাইলে ঘরে বসেই পেডিকিওর করতে পারনে। বাসা বসে Pedicure/পেডিকিওর করার জন্য নিচে উল্লেখিত নিয়মগুলো অনুসরন করুন। আশা করছি নিচের নিয়ম গুলো ফলো করলে ভালো ফল পাবেন। 

  1. প্রথমে পায়ের নখে যদি নেইল পলিশ দেওয়া থাকে সেটা নেইল রিমুভার দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। 
  2. তারপর একটি বড় বালতি বা গামলা-তে গরম পানি ও একটুখানি নর্মাল শ্যাম্পু (সান্সিল্ক বা প্যান্টিন যে কোনো) ভালোভাবে মিক্স করে তাতে কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে পুরো ১০ মিনিট দুটো পা একসাথে ডুবিয়ে রাখুন। 
  3. ১০ মিনিট শেষে পুরো পা ওই পানিতেই হাল্কা ম্যাসাজ করে একটি ব্রাশের সাহায্য পায়ের তলায়, গোড়ালিতে মাস্যাজ করে নিন। গরম পানিতে ভিজানোর কারনে চামড়াটি নরম হয়েছে এবং ব্রাশ দিয়ে ঘষামাজার জন্য মরা কোষ দূর হবে। 
  4. তারপর পুরনো টুথব্রাশ এর সাহায্য নখ গুলোও হাল্কা ঘষামাজা করে পরিষ্কার করে নেন। 
  5. তারপর গরম পানি থেকে পা বের করে একটি ফ্রেশ তোয়ালে দিয়ে পা পুরো মুছে নিন। 
  6. পায়ের নখ ঠিক ভাবে কাটবেন নেইল-কাটার দিয়ে। তারপর নেইল শারপ্নার দিয়ে নখ গুলো শেইপ করে নিবেন পছন্দ মতো যেমন রাউন্ড অথবা স্কয়ার. যদি নখ বড় রাখতে চান তবে শুধু নেইল শারপ্নার দিয়ে শেইপ করে নিতে পারেন।
  7. তারপর নেইল ফাইলার দিয়ে নেইল শাইন করে নিন। 
  8. এখন একটি স্ক্রাব তৈরি করুন যেখানে থাকবে ২ চা চামচ চিনি, ১ চা চামচ কফি ও ১ চামচ পিওর নারিকেল তেল. তারপর আলতো হাতে নিয়ে দুই- তিন মিনিট পায়ে স্ক্রাব করে নিন। স্ক্রাবিং শেষে তোয়ালে দিয়ে মুছে নিবেন। 
  9. এখন একটি ব্রাইটনিং মাস্ক তৈরির পালা। ১ চামচ বেসন, ১টি অর্ধেক টমেটওর রস এবং ১ চা চামচ গোলাপজল দিয়ে মাস্কটি তৈরি করে পায়ে লাগান ও ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। 
  10. অবশেষে একটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বডি লোশন লাগান ও নেইল পলিশ দিতে চাইলে নেইল পলিশ লাগাতে পারেন৷ 

এছাড়াও গরম পানিতে লেবু, লবন, শ্যাম্পু অথবা শুধু এপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি মিশিয়ে পা ভিজিয়ে, ভালোভাবে ঘষামাজা করে ভালোভাবে স্ক্রাবিং করলেও ঝটপট পেডিকিওর হয়ে যায়। পায়ের যদি ট্যান রিমুভ করতে হয় তবে টমেটো ও কাঁচা দুধ দিয়ে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পেডিকিওর যে প্রতিদিন করতে হবে এমন করা যাবে না। এটি প্রতি সপ্তাহে ১ দিন অথবা খুব বেশি ব্যস্ত থাকলেও প্রতি মাসে অন্তত ২ বার ব্যবহার করা উচিত।  

মেনিকিওর কি? 

Manicure/মেনিকিওর হলো হাতের নখ, আঙুল, কবজি, বাহু এর যত ময়লা, মরা কোষ সকল কিছু পরিষ্কার করা। বাসায় বসে বসে কোনো কাজ না করলেও দেখা যাবে ১ বার হলেও নখে ও আশেপাশে ময়লা হয়েছে বা ফেসিয়াল এর মতো স্ক্রাবিং এর প্রয়োজন মনে হয়৷ তাই পেডিকিওর এর মতো মেনিকিওর ও ঘরে বসে করা সম্ভব।

মেনিকিওর করার নিয়ম

Manicure – পেডিকিওর এর মতোই বাসায় বসেউ মেনিকিওর করা যায়। বাসায় বসে মেনিকিওর করার নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া হলো। মেনিকিওর করার জন্য নিচের নিয়ম ও পদ্ধতিগুলো ফলো করলে আশা করি কার্যকরী ফলাফল পাবেন। তাহলে দেরি না করেচলুন মেনিকিওর করার পদক্ষেপ গুলো জেনে নেই।

  1. প্রথমে নেইল পলিশ থাকলে সেটা নেইল রিমুভার দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। 
  2. একটি পাত্রে কুসুম গরম পানি নিন, লেবুর রস, অলিভ অয়েল  ও শ্যাম্পু মিশান। কিছু গোলাপ বা অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি ও দিতে পারেন। তারপর হাত চুবিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। 
  3. তারপর পুরনো টুথব্রাশ এর সাহায্য নখ গুলোও হাল্কা ম্যাসাজ করে নিন।
  4. নেইল কাটার দিয়ে নখ গুলো পছন্দমতো শেইপ করুন। এরপর বাফার দিয়ে নখ ঘষে,  ভ্যাস্লিন দিয়ে নখে লাগিয়ে কিছুখন অপেক্ষা করুন। তারপর কিউটিসিল পুশ করে কেটে নিন। ফাইলার দিয়ে নেইল শাইন করে নিন। 
  5. একটি বাটিতে ২ চা চামচ চিনি, ১ চা চামচ কফি ও ১ চা চামচ মুলতানি মাটি  মিশিয়ে হাতের প্যাক তৈরি করুন। তারপর হাতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। পানি দিয়ে হাত ধুয়ার সময় নখে লেবু ঘষে নিন।
  6. হাত ভালোভাবে মুছে, একটি বডি লোশন লাগান ও পছন্দ অনুযায়ী নেইল পলিশ লাগিয়ে নিন। 

এরকম ভাবে না করলেও যদি তাড়াহুড়ো করে করতে চান তবে নখ কেটে অথবা পরিষ্কার করে গরম পানিতে শ্যাম্পু, অলিভ অয়েল অথবা লেবু মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে একটি লেবু দিয়ে অথবা টমেটো দিয়ে ঘষলে পুরো জায়গায় মরা কোষ দূর হবে এবং পরিষ্কার হবে। 

পেডিকিওর ও মেনিকিওর এর আরও কিছু টিপস

এছাড়া স্ক্রাবিং এর জন্য শুধু বেবি অয়েল ও লবণ  অথবা কফি ও নারিকেল/অলিভ অয়েল মিক্স করে লাগালেও একি কাজ করবে। মাস্কের সময় না থাকলেও প্রতি সপ্তাহে যদি ক্লিঞ্জিং ও স্ক্রাবিং টা ঠিকভাবে করা হয় তবে মাসে একবার মাস্ক সহ পেডিকিওর ও Manicure/মেনিকিওর করলেও হাত-পা এর যত্ন নেওয়া সম্ভব। মাস্কের জন্য আপনি বাসায় কোনো ক্লে মাস্ক থাকলে সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। 

যখন এত সহজে হাত পা সুন্দর ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা যাচ্ছে, তবে আর পার্লারের দুশ্চিন্তা কেন? সুন্দর হাত পা দেখতে কেই বা চান না বলুন? এর জন্য পেডিকিওর ও মেনিকিওর ছাড়া কোনো গতি নেই।একটি ম্যানিকিউর এবং পেডিকিউর আপনার হাত ও পায়ের যত্নের সমান। হাত-পা ঘন ঘন অপব্যবহার করা হয়। দেহের এই অংশগুলি সমস্ত ধরণের আবহাওয়া, ক্রিয়াকলাপ, রাসায়নিকগুলি, ধূলিকণা, দূষণ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে। এগুলি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং স্বাস্থ্যের কোনও জটিলতা রোধ করার জন্য তাদের যত্ন নেওয়া উচিত। 

নিয়মিত মেনিকিওর এবং পেডিকিওর নিশ্চিত করে তোলে যে আপনার নখগুলি যেন খারাপ অবস্থাতে না চলে, উদাহরণস্বরূপ ছত্রাকের সংক্রমণে জর্জরিত। যদি আপনি চলমান ভিত্তিতে আপনার পেরেকের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আগ্রহী হন, তবে মেনিকিওর এবং পেডিকিওর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মেনিকিওর এবং পেডিকিওর আরও কিছু উপকারিতা

মেনিকিওর বা পেডিকিওর করার প্রক্রিয়াটিতে সাধারণত হাত বা পায়ে (বা উভয়) ম্যাসেজ থাকে। ম্যাসেজ প্রচলন জোরদার করার একটি দ্রুত এবং কার্যকর উপায়, যা শীতের মাসগুলিতে বিশেষত ধীর এবং আলগা হতে পারে।

দুর্বল সঞ্চালনের ফলে হাত বা পায়ে ঠান্ডা বা অসাড়তা দেখা দিতে পারে পাশাপাশি ফোলাভাব বা জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে. ম্যাসেজের প্রভাব হ’ল যৌথ গতিশীলতা উন্নত করতে এবং ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করার জন্য শরীরে রক্ত ​​প্রবাহ বাড়ানো। বাজারে এখন বিভিন্ন টুলস ও পাওয়া যায় ঘরে বসে ব্যবহার করার জন্য। বাসায় বসে পার্লার এর মতো কেমিক্যাল পন্য বেশি ব্যবহার না করে, কম খরচে, সময় ও অর্থ বাচিঁয়ে, এগুলো সময় দিয়ে নিজে কষ্ট করে করলে নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব। 

আরও পড়ুনঃ মুখ ফর্সা করার ক্রিম

Spread the love