https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/07/mushroom.jpg

কয়কে দশক আগে বাংলাদেশে মাশরুম বিপ্লব ঘটলেও অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই খাবারটি এখনও বাংলাদেশের জনমানুষের খাবার মেনুতে যায়গা দখল করে নিতে সক্ষম হয়নি। মাশরুমের কদর রয়ে গেছে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতন মানুষ, অভিজাত রেস্টুরেন্ট এর খাবার মেনু্তে ও বভিন্ন ঔষধ, প্রসাধনী শিল্পের উপকরন হিসেবে। তবে এই মাশরুম চাষাবাদের মাধ্যমে কয়েক ডজন সফল উদ্যোক্তা আমাদের বাংলাদেশ ছাড়িয়ে, ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বেশ শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেয়ে থেকে মহিলা, যুবক থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করনের মাধ্যমে সফল হয়েছে।

সম্মানিত ভিজিটর, আজকের লেখাজুড়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, বিশ্বের বিখ্যাত সব হেলথ ও রিসার্চ ম্যাগাজিনের তথ্য মতে মাশরুম এর পুষ্টিগুন, মাশরুমের উপকারিতা, বন্য মাশরুমের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা, মাশরুম কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, দাম সম্পর্কে। তো আর দেরি না করে  সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ

বিশেষজ্ঞদের মতে মাশরুম একটি উচ্চমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে প্রায় ২৩-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যেখানে ১০০ গ্রাম মাংসে ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ও সেলেনিয়াম। এছাড়াও এতে রয়েছে এরগোথিওনেইন নামক এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি-১২, ফাইবার ও এনজাইম। এতে কার্বো-হাইড্রেটের পরিমাণ খুবই সামান্য।

মাশরুমের উপকারিতা

পুষ্টিগুন শুনেই ইতিমধ্যে আপনি হয়তো কিছুটা হলেও ধারনা করতে পারছেন মাশরুম কতোটা উপকারি হতে যাচ্ছে। চলুন এ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের মতে মাশরুমের নানা উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মাশরুম

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন এবং মিনারেলের ভুমিকা অনেক বেশি। আমাদের দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা যেসব নামীদামী খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেয়ে থাকি তার তুলনায় মাশরুমে বেশি প্রোটিন রয়েছে। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত মিনারেল ও প্রোটিন না থাকলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করে যায় ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি এতে থাকা এরগোথিওনেইন মানব দেহের ঢাল হিসেবে কাজ করে।

২. মাশরুম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে অনেক খাবারের সুনাম রয়েছে তবে মাশরুম কিছুটা এগিয়ে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফিবার বা আঁশ এবং কম সোডিয়াম ও প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম মানব দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া এর অন্যতম উপাদান গুলোর মধ্যে কিটিন, ভিটামিন বি, সি, ও ডি এবং লোভাস্টিটিন, ইরিটাডেনিন, এ টাডেনিন উচ্চচক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। (সুত্রঃ বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস বা এআইএস)।

৩. স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ

বিশেষজ্ঞদের মতে মাশরুমে রয়েছে পলিকেন ও সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। আরও রয়েছে মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সালফার এই উপাদানগুলো আপনাকে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। সূর্যের আলোতে যে মাশরুম জন্মায় সে সব মাশরুমে প্রচুর ভিটামিন ডি থেকা যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ বৃদ্ধিতে সহায্য করে।  নিয়মিত মাশরুম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোটেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

৪. গর্ভকালীন সুস্থতা

অনেক গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে ভ্রূণেরস্বাস্থ্য ভালো বা উন্নতির জন্য ফলিক এসিড বা ফোলেট  এর পরিপুরক খবার গ্রহন করে থাকে। তবে মাশরুমেই এই সকল উপদান রয়েছে। ফুড ডেটা সেন্ট্রাল সার্চ রেজাল্ট এর তথ্য মতে এক কাপ কাঁচা মাশরুমে ১৬.৩ মাইক্রোগ্রাম ট্রেডেড সোর্স ফোলেট থাকে।

৫. শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে মাশরুম

মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ও ভিটামিন-ডি। শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে এই সকল উপাদানের গুরুত্ব অনেক। আপনার বাচ্চার খাবার তালিকায় পুষ্টিকর এই খাবারটি যোগ করতে পারেন।

৬. ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি

ডায়েট্রি ফাইবার টাইপ-২ ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব মেডিসিন এর একটি গবেষণা অনুসারে যেসব লোক প্রচুর পরিমাণ ফাইবার খায় তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কম থাকে। আর যাদের ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস রয়েছে ফাইবার তাদের  রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এক কাপ কাটা কাঁচা মাশরুম (৭০ গ্রাম) প্রায় ১ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে।

মাশরুম এর অন্যান্য উপকারিতা

উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন উপকারিতা ছাড়াও মাশরুমের কিডনির বিভিন্ন রোগ ও এলারজি থেকে মুক্তি দেয়। মাশরুমে স্ফিংগ্লিপিড ও ভিটামিন-১২ থাকার কারনের এই খাবার আপনার স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে। এটি খেলে হাইপার টেনশন দূর করে ও রক্ত সবল্পতা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়, হেপাটাইসিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া এতে থাকা খনিজ লবন চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মাশরুমের দাম

অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাশরুমের বিভিন্ন জাত রয়েছে। জাত ও গুনাগুন ভেদে এদের দামের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। ১ কেজি কাঁচা বা তাজা বাটন মাশরুমের দাম ৳৪৫০-৳৫০০। ১ কেজি শুকনো মাশরুমের দাম ৳৩০০০-৳৪৫০০। ১ কেজি তাজা বা কাঁচা কান মাশরুমের দাম ৳১৫০-৳২০০ এবং ১ কেজি শুকনো কান মাশরুমের দাম ৳১২০০।

মাশরুমের অপকারিতা

মাশরুমে নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। তবে এর অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আপনার কোন ধারনা আছে কি? আসলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে প্রচলন আছে ব্যাঙের ছাতা নামক একটা কথা, আসলে এগুলো হচ্ছে বন্য মাশরুম। যেগুলো আপনার উপকারের বদলে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এই বন্য মাশরুমে রয়েছে নানা ক্ষতিকর উপাদান ও উচ্চ স্তরের ভারী ধাতব ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে নির্ভরযোগ্য উৎস হতে অর্থাৎ বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় এমন কোন উৎস হতে মাশরুম ক্রয় করে খান।

সর্বশেষ

সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান, খাওয়া ও ঘুম তথা স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে নিরবে মাশরুম চাষের বিপ্লব ঘটলেও এটি আমাদের সাধারন মানুষের খাবার তালিকায় যায়গা করে নিতে পারেনি। তাই দেশীয় উদ্যোক্তা ও তরুনদেরকে উৎসাহ দিতে পাশাপাশি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মেটাতে আমাদের খাবার তালিকায় মাশরুম যোগ করা এখন সময়ের দাবি। ক্ষতিকর মাশরুম খাওয়া ও বিক্রি হতে বিরত থাকুন।

আপনাদের কোন প্রশ্ন, অভিযোগ, কিংবা পরামর্শ থাকলে শেয়ার করতে পারেনা আমাদের মাঝে।