dark circle

চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল হয়ে গেছে? কি কারনে চোখের নিচে ও চারপাশে কালো দাগ হয়!ছেলে কিংবা মেয়েদের চোখের নিচের কালো দাগ কিভাবে দূর করবেন?

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা চোখের নিচে ও চারপাশে দাগ হয়ে যাওয়াকে ডার্ক সার্কেল বলে। আজকের লেখায় কথা হবে কি কারনে ডার্ক সার্কেল হয়। কাদের ডার্ক সার্কেল হয়। কিভাবে ডার্ক সার্কেল দূর করা যায় ও এর ঔষধ এবং বিশেষ ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত।

কি কারনে বা কেন ডার্ক সার্কেলস হয়

যে কোণ বয়সী মানুষের ডার্ক সার্কেল হতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। তবে বিশেষ কিছু কারনে যুবক যুবতী কিংবা অল্প বয়সী কিশোর কিশোরীদেরও ডার্ক সার্কেল হতে পারে।

১. ক্লান্তি

অতিরিক্ত ঘুম, চরম অবসন্নতা, আপনার স্বাভাবিক শোবার সময় থেকে কয়েক ঘন্টা এদিক সেদিক থাকার কারণে আপনার চোখের নিচে অন্ধকার বৃত্ত – Dark Circles তৈরি হতে পারে। ঘুমে তারতম্য হলে বিশেষ করে নিয়মিত ঘুমাতে যাওয়ার সময় এর তারতম্য হলে আপনার চোখের চারপাশ কালো হয়ে যেতে পারে।

সময় বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনার মুখে পিম্পল বা ব্রন জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনার শরীরে নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে।

২. বয়স

বয়সের সাথে সাথে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাওয়া একটি কমন বিষয়। যা সচারাচার প্রায় সবার সাথেই দেখা যায়। আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার চামড়া পাতলা হতে থাকে।

পাশাপাশি আপনার শরীরের চর্বি কমতে থাকে এবং আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে কোলাজেন দরকার। এটি হওয়ার সাথে সাথে আপনার ত্বকের নীচের কালো জায়গার রক্তনালীগুলি আরও দৃশ্যমান হয় যার ফলে আপনার চোখের নীচের  অন্ধকার হয়ে যায়।

৩. আই স্ট্রেইন

বেশি সময় টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে বিশেষ করে কাছাকাছি বসে তাকিয়ে থাকার কারনে আপনার চোখের নানাবিধ সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি চোখের চারপাশে রক্তনালিগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর এর ফলে আপনার চোখের চারপাশের স্কিন কালো হয়ে যেতে পারে।

৪. এলার্জি

এলার্জি জনিত সমস্যা ডার্ক সার্কেল হওয়ার অন্যতম কারন। যেখন আপনার শরীরে এলার্জির রিয়েকশন দেখা দেয় তখনই আপনার শরীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার শরীর হিস্টামিনগুলো প্রকাশ করে।

এর ফলে আপনার শরীরে নানা লক্ষন যেমন- চুলকানি, লালচেভাব, চোখ জ্বলা সহ হিস্টামিনগুলোও আপনার রক্তনালীগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এবং এগুলো আপনার ত্বকের নিচে আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠে।

৫. পানিশূন্যতা

পানির অপর নাম জীবন। পর্যাপ্ত না ঘুমালে যেমন শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। তেমনি একই ভাবে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে হাজারো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন।

আপনার শরীর যখন পর্যাপ্ত পানি না পায় আপনার ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। এবং আপনা চোখের দিকে তাকালে মনে হয়। গর্তে ঢুকে গেছে। আর আপনার চোখের চারপাশ কালো রঙ ধারন করে।

৬. সান ওভার এক্সপোজার

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। সূর্যের তাপ আপনার স্কিনের কালার পরিবর্তন করে দিতে যথেষ্ট। আপনি যদি বেশিরভাগ সময় বাহিরে কাটান বিশেষ করে কড়া রোদের তাপে আপনার মুখের রঙ কালচে ভাব ধারন করতে পারে।

৭. জেনেটিক্স

অনেক সময় দেখা যায় চোখের নিচে কালচে দাগ বা ডার্ক সার্কেল একটি জিনগত সমস্যা। অর্থাৎ আপনি উত্তারিধিকারসুত্রেও এই ধরনের দাগ নিয়ে জন্মাতে পারেন। অনেকের ছোটবেলা হতেই এই ধরনের কালচে দাগ দেখা যায়। এবুং বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের এই দাগ দূর হয়ে যেতে দেখা যায়।

ডার্ক সার্কেল দূর করার উপায় বা চিকিৎসা

ডার্ক সার্কেল – Dark Circles আসলে কঠিন কোন রোগ নয়। সম্পূর্ণ ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর কড়া সম্ভব। তো চলুন ডার্ক সার্কেল দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

১. কোল্ড কমপ্রেস ব্যবহার করুন

কোল্ড কমপ্রেস আপনার চোখের চারপাশে থাকা ডার্ক সার্কেল দূর করতে দারুন কাজ করে। একটি পরিষ্কার ওয়াশক্লথ নিয়ে তার মধ্যে বরফ নিয়ে চোখের নিচের দিকে দিয়ে ২০-১৫ মিনিট রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন ঠাণ্ডা লেগে না যায় আবার। প্রতিদিন না পারলে ১ দিন পর পর এপ্লাই করুন। আশা করা যায় ১৫-২০ দিনের মধ্যেই ভালো ফলাফল পাবেন। আপনি চাইলে ঠাণ্ডা পানিদিয়ে ভিজিয়েও এপ্লাই করতে পারেন।

২. ডার্ক সার্কেল দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুমান

নিয়মিত ঘুমের অভাবে যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা হয় তবে আজ থেকেই সময়মতো ও পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। এবং হাতে সময় থাকলে বিকালে ১-২ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

৩. টি ব্যাগ ব্যবহার করুন

ডার্ক সার্কেল দূর করতে টি ব্যাগ দারুন কাজ করে। চায়ের মধ্যে রয়েছে ক্যাফিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, আপনার রক্তনালীগুলি সংকুচিত করার পাশাপাশি আপনার ত্বকের নীচে তরল হ্রাস করতে সহায়তা করে।

প্রথমে দুই ব্যাগ ব্লাক অথবা গ্রিন টি ব্যাগ নিন। গরম পানিতে ৫মিনিত চুবিয়ে রাখার পর ব্যাগ দুটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফ্রিজে রাখুন। এর পর ফ্রিজ থেকে টি ব্যাগ দুটি বের করে আপনার চোখের নিচে বিশেষ করে কালচে যায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। এর পর পরিষ্কার নরমাল পানি দিয়ে ভালো ভাবে মুখ দুয়ে ফেলুন।

৪. মাথা উপরের দিকে রাখুন

আপনার চোখের পাশে দাগ পড়ার অন্যতম কারন হতে পারে আপনার ঘুমের স্টাইল। অর্থাৎ আপনি কিভাবে ঘুমান। নরম ও হালকা উচু বালিশে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার চোখের নিচে ফোলা দেখানো থেকে রক্ষা করবে।

৫. মেকআপ ব্যবহারে সচেতন হউন

মেকআপ আপনার ডার্ক সার্কেল দূর করতে পারেন না। এগুলো কেবল আপনার চোখের বা মুখের কালো দাগ আড়াল করে রাখে। এছাড়া আমাদের ফেসের স্কিন খুবই সেনসেটিভ। কোন মেকআপ ব্যবহারের পর হঠাৎ কোন উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে বন্ধ করে দিন। কালো জায়গাগুলতে মেকআপ না লাগানো সব থেকে উত্তম। এতে থাকা বিভিন্ন রসায়নিক উপাদান আপনার জন্য আরও ক্ষতির কারন হতে পারে।

৬. টমেটো

ডার্ক সার্কেল দূর করতে টমেটোও বেশ ভালো কাজ করে। এক চা চামচ টমেটোর রসের সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চোখের নিচে লাগান এবং ১০ মিনিট রাখার পর থান্দাপানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে ২ বার করে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এছাড়াও টমেটো, লেবু ও পুদিনা পাতার রস খাওয়া যেতে পার।

৭. ভিটামিন জাতীয় খাবার গ্রহন করুন

চোখ কিংবা স্কিনের দাগ দূর করতে বেশি বেশি ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, ই, ও সি জাতীয় খাবার গ্রহন করুন। ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ খাবার কোলাজেন বাড়াতে এবন ত্বক থেকে র‍্যাডিকেল সরিয়ে নিতে সহায়তা করে। অপরদিকে ভিটামিন ই ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্টকারী এনাইজমগুলোর সাথে লড়াই করে। এবং ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে লওরাই করে যা দাগ অপসারনে সাহায্য করে।

৮. বেশি বেশি শাকসবজি খান

সবুজ শাকসবজি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি যেমন- পালং শাক, ব্রোকলি ও অন্যান্য সবুজ শাক ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার বর্ণহীনটা ও শিথিলতা হ্রাস করে। এছাড়া পেঁপে, বাদাম, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে।

ডার্ক সার্কেল দূর করার মেডিকেল ট্রিটমেন্ট

ঘরোয়া চিকিৎসায় চোখের নিচের কালচে ভাব দূর না হলে আজকাল বিভিন্ন ধরনের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। ডার্ক সার্কেল – Dark Circles দূর করার কিছু প্রচলিত চিকিৎসা-

ক্যামিকেল পিলস মূলত স্কিনের ড্যামেজ সেল রিমুভের জন্য এপ্লাই করা হয়। এছাড়াও লেজার সার্জারি করা যেতে পারে। চোখের নিচের কালচে দাগ দূর করতে নানা ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্রিম এপ্লাই করুন।

তবে একেক স্কিনের জন্য এক এক ধরনের ট্রিটমেন্ট পারফেক্ট। তাই কোন ট্রিটমেন্ট বা কোন ঔষধ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এজন্য স্কিন বা ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply