https://tipswali.com/wp-content/uploads/2021/05/chandan-powder.jpg

রূপচর্চায় চন্দন গাছের পাউডার বা Sandalwood কাঠের সুনাম সেই প্রাচীনকাল থেকে। মূলত শ্বেত বা সাদা ও লাল বা রক্ত চন্দন এই দুই ধরনের চন্দন গাছ পাওয়া যায়।

সম্মানিত ভিজিটর আজকের লেখাজুড়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা কররো রূপচর্চায় চন্দনের ব্যবহার, প্রকারভেদ শ্বেতচন্দন ও রক্ত চন্দন, উৎপত্তি, উপকারিত, ফেসপ্যাক, ক্রিম, ব্যবহারের নিয়ম, আসল চন্দন চেনার উপায়, দাম, কোথায় আসল স্যান্ডেলউড কিনতে পাওয়া যায়, বীজ বা চারা কোথায় পাওয়া যায় সহ অন্যনায় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত।

চন্দন কি?

স্যান্ডেলউড (Sandalwood) বা চন্দন হচ্ছে স্যান্টালাম প্রজাতির গাছের এক ধরনের কাঠ। এই দেখতে কিছুটা হলদে, অন্যান্য কাঠের তুলনায় ভারী, সূক্ষ্ম দানা ও সুগন্ধি যুক্ত। এই কাঠের সুগন্ধ প্রায় কয়েক দশক ধর থাকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল কাঠগুলোর মধ্য একটি। মূলত রূপচর্চা, প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি ও ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

উৎপত্তি

বিশ্বের সব চেয়ে বেশি স্যান্ডেলউড সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে ইন্ডিয়া (ভারত)। এর পরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া,  ও অন্যান্য দেশ। ১৯৯৪ সালের দিকে ভারত বিশ্বের প্রায় ৯৪ শতাংশ চন্দন সরবরাহ করতো।

প্রকারভেদ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ও রঙের কাঠ চন্দদ পাওয়া যায়। গুনাগুন ও কাজের দিক থেকেও এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মূলত দুই ধরনের চন্দন গাছ রয়েছে রক্ত চন্দন ও শ্বেতচন্দন।

রক্ত চন্দন

রক্ত বা লাল চন্দন রঞ্জনা নামেও পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Red Sandalwood, আর বৈজ্ঞানিক নাম আডেন্থের পাভোনিনা (Adenanthera Pavonia) মূলত রূপচর্চা ও ভেষজ বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার কাজে চন্দন কাঠ বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি দেখতে কিছুটা লালচে হয়ে থাকে। এই গাছের উচ্চতা  সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফিট হয়ে থাকে। রুপ চর্চায় এর ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে।

শ্বেত চন্দন

White Sandalwood শ্বেত চন্দন রঞ্জনার তুলনায় একটু বেশি দামি। সাদা স্যান্ডেলউড সাধারণ সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর এবং মুখ এবং গলা ব্যথায় নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। খাবার এবং পানীয়গুলিতে, সাদা চন্দন স্বাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সাদা স্যান্ডেলউড কাঠ তেল সাবান, প্রসাধনীতে এবং সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

রূপচর্চায় রক্ত চন্দনের উপকারিতা

রূপচর্চায় Sandalwood গুঁড়া ও চন্দনের নানা ফেসপ্যাকের বেশ সুনাম রয়েছে। চলুন এ পর্যায় রূপচর্চায় লাল বা রক্ত চন্দনের নান ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ব্রণ বা ফুস্কুরি দূর করতে

ব্রণ একটি কমন সমস্যা। আমাদের মধ্যে মোটামুটি অনেকেরই কোন না কোন সময়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে টিনএজ বয়সে ব্রণের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ব্রণ দূর করার উপয় সম্পর্কে সার্চ করলে আপনি কয়েক ডজন পদ্ধতি বা টিপস খুঁজে পাবেন। তবে সবার স্কিনের ধরন এক রকম না হওয়ার কারনে সব টিপস বা পদ্ধতি সবার জন্য কাজে আসে না। আপনি যপদি ইতিমধ্যে ব্রণ দূর করার জন্য অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভালো ফলাফল না পেয়ে থাকেন তবে ব্রণ দূর করতে রক্ত Sandalwood ট্রাই করে দেখতে পারেন।

স্কিনের কালো দাগ দূর করতে

স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে আপনার স্কিন যদি রোদে পুড়ে কালো হয়ে যায়, তবে স্কিনের কালো ভাব দূর করতে রক্তচন্দন ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত Sandalwood ব্যবহারে আপনার স্কিনের প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। পাশাপাশি এটি আপনার স্কিনের টক্সচারের উন্নতি ও আপনার স্কিনে দাগ  দূর করতেও দারুন কাজ করে।

চন্দনের অন্যান্য উপকারিতা

ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি এটি ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস দূর করতে দারুন কাজ করে। অল্প বয়সেই স্কিন ঝুলে গেছে মনে হলে Sandalwood ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার স্কিনকে সতেজ করে তুলতে সাহায্য করবে ও টানটানে রাখবে।

চন্দন কাঠের পাউডার এর ৫ টি ফেসপ্যাক

সরাসরি চন্দন কাঠ গায়ে মাখা যায় না। তবে বাজারে রক্ত চন্দনের গুড়া পাওয়া যায় এই চন্দন পাউডারের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন। নিচে রক্ত চন্দনের কয়েক্তি কার্যকরী ও সহজ ফেসপ্যাক ও এগুলো বানানোর নিয়ম দেওয়া হল-

১) চন্দন ও দুধের ফেসপ্যাক

প্রাকৃতিক ভাবে স্কিনের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা আনতে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন। Sandalwood পাউডার বা গুঁড়ার সাথে পরিমান মতো মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।

মুখের স্কিনে আস্তে আস্তে ক্রিমের মতো করে লাগান এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। মুখ টানটান মনে হলে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন যেন বেশি শুঁকিয়ে না যায়। এছাড়াও হাত ও পায়ের স্কিনের উজ্জ্বলতা ফিরিতে আনতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটু বেশি পাতলা করে নিবেন।

২) মধু , কাঁচা হলুদ ও Sandalwood পাউডার

রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের বেশ সুনাম রয়েছে। তবে আপনি স্যান্ডেলউড পাউডার বা গুঁড়া ও কাচা হলুদের সাহায্যে চমৎকার একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। পরিমান মতো শুকনা হলুদের গুঁড়া (রান্নার প্যাকেটের গুঁড়া নয়) কিংবা কাঁচা হলুদ বেটে একটি বাটিতে নিন, সাথে এক চামচ মধু, ২-৩ চামচ শসার রস, ১ চামচ চালের গুঁড়া, পরিমান মতো গোলাপ জল, আধা চামচ বেসন ও এক চামচ চালের চিনি ও ১ চামচ Sandalwood গুঁড়া বা পাউডার দিন। একত্রে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে স্কিনে প্রয়োগ করুন। ২-৩ দিন পর পর ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।

৩) নিম ও চন্দন কাঠের গুঁড়া

নিমের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা প্রায় কম বেশি সবাই জানি। আপনি এই নিমের সাথে চন্দন পাউডার মিশিয়ে চমৎকার একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। এজন্য পরিমান মতো নিমের পাউডার এর সাথে স্যান্ডেলউড কাঠের পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবং ধীরে ধীরে স্কিনে লাগান। ব্রণ দূর কতে এই প্যাকটি চমৎকার কাজ করে। ব্যবহারে পর পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৪) এলোভেরা ও Sandalwood পাউডার

এলোভেরার নাম শুনে থাকবে না এমন মানুষ নেহাত কমই আছে। এলোভেরার রয়েছে চমৎকার গুনাগুন। মুখের স্কিনের দাগ দূর করতে এলোভেরা জেল এর সাথে চন্দন পাউডার মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন ও ক্রিমের মতো করে মুখে লাগান। কনুইয়ের কালো দাগ দূর করতেও এটি ব্যবহার করতে পারেন।

৫) কমলার ছোলার গুঁড়া ও স্যান্ডেলউডপাউডার

কি অবাক হয়ে গেলেন? কমলার খোসার গুঁড়া দিয়ে আবার কিসের রূপচর্চা! কুল, কমলার খোসার গুঁড়ার চমৎকার গুনাগুন সুশুনলে আপনার মাথাঘুরে যেতে নাও পারে তবে প্রথমবার জেনে থাকলে একটু অবাক হতেই পারেন। যাহোক এক চামচ কমলার খোসার গুঁড়া, ১ চা চামচ পরিমান Sandalwood পাউডার ও পরিমান মতো ১ কিংবা চা চামচ গোলাপজলের সাহায্যে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবং মুখের স্কিনে লাগান।

স্যান্ডেলউড ক্রিম

বর্তমানে বিভিন্ন ফেসিয়াল বা স্কিন কেয়ার ব্রান্ডের চন্দনের ক্রিম পাওয়া যায়। এগুলো মুলত স্কিনের জন্য বিশেষ উপাদান (রাসায়নিক), ও চন্দের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। তবে এই ধরনের ক্রিমের তুলনায় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বানানো ফেসপ্যাক ব্যবহার করা উত্তম। কোন ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই স্কিন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।

চন্দন কাঠের গুঁড়ার দাম

গুনের পাশাপাশি দামের দিক থেকেও বেশ। ১০০ গ্রাম রক্ত বা লাল চন্দন কাঠের গুঁড়ার দাম ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। সে হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে ১ কেজি লাল চন্দনের দাম ৬ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা।  অন্যদিকে এক কেজি শ্বেতচন্দনের দাম ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।

আসল চন্দন কাঠ চেনার উপায়

অনেক দামি হওয়ায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী নকল চন্দন দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছে। খালি চোখে দেখে চেনা অনেকটা কঠিন কাজ। আসল চন্দন কাঠ চেনার উপায় হচ্ছে- প্রথমত এটি ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কাটলে নরম স্তর তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত হাতে নিলে মিষ্টি সুগন্ধি হয়ে মনে হবে। আসল স্যান্ডেলউড চেনার আরও একটি বিশেষ উপায় হচ্ছে এর সুবাশ বা ঘ্রান এক দশকেও শেষ হবে না।

চন্দন গাছ চাষ

আপনি মহামুল্যবান এই উদ্ভিদটি চাষ করতে পারেন। নার্সারিতে এই গাছের চারা কিনতে পাওয়া যায়। প্রথম দুই বছর যত্ন নিলে এর পরে আর কোন যত্ন নেওয়া লাগে না। ২০ বছর বয়সী একটি Sandalwood গাছের দাম হতে পারে ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা। চন্দন গাছের কাঠই কেবল দামি না এর শিকরও সমান দামি।

সর্বশেষ

সম্মানিত ভিজিটর আপনার কোন মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ থাকলে শেয়ার করতে পারেন আমাদের সাথে।  বাংলা ভাষায় টিপস পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আপনাদের প্রিয় টিপসওয়ালী ডট কম। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন আপনার বন্ধু কিংবা প্রিয় মানুষটির সাথে।

Spread the love